রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি ভাঙচুর চালিয়েছে তৌহিদি জনতা। এ সময় নুরাল পাগলের ভক্তদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, ভাঙচুর করা হয় গাড়ি। পরে নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েছে জনতা।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে।
পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা বহু বছর আগে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন দরবার শরিফ। আশির দশকের শেষের দিকে নিজেকে ইমাম মাহাদি দাবি করে আলোচনায় আসেন তিনি। ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়। পরে ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ জনরোষ এড়াতে তিনি মুচলেকা (অঙ্গীকারনামা) দিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। এর কিছুদিন পর তিনি আবার ফিরে এসে তার দরবার শরিফের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন।
গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ওই দিনই সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার ভক্ত-অনুরাগীদের অংশগ্রহণে দরবার শরিফের ভেতরে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাত ১০টার দিকে তাকে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু স্থানে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়। পবিত্র কাবা শরিফের আদলে তার কবরের রং করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৌহিদি জনতা। তাদের আন্দোলনের ফলে কবরের রং পরিবর্তন করা হয়।
এ বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক হয় তৌহিদি জনতা ও নুরাল পাগলার স্বজনদের।
পরে এ বিষয়ে দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তৌহিদি জনতা। কবর নিচে নামানো না হলে ভেঙে ফেলার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুমার পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তৌহিদি জনতা। বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলের দরবারে। পাল্টা আক্রমণ করেন নুরাল পাগলের ভক্তরা। ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ তুমুল সংঘর্ষে দুপক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন। একপর্যায়ে নুরাল পাগলের দরবারে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে লাশ কবর থেকে তুলে গোয়ালন্দ পদ্মার মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ওপর নিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের দুটি গাড়ি। এতে ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী এলে তাদের ওপরও চড়াও হন।
হামলার ঘটনায় একজন নিহত
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবার শরিফে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় রাসেল মোল্লা (২৮) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শরিফ ইসলাম এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ার্ড মাস্টার আতিয়ার রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।
হামলার ঘটনায় মামলা, আসামি সাড়ে ৩ হাজার
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবার শরিফে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই মো. সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। এতে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়ালন্দ থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ‘ইমান আকিদা রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ফকীর মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা দরবারের দিকে যেতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশ তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করে।