বর্ণাঢ্য আয়োজনে তিন যুগপূর্তি উৎসব উদ্যাপন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব (রাবি প্রেসক্লাব)। রোববার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ৯টায় কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।
এ সময় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি বের হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের গ্যালারি কক্ষে ‘অনলাইন যুগে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মিলিত হন তারা।
আলোচনা সভায় প্রেসক্লাবের সভাপতি বেলাল হোসাইন বিপ্লবের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সজলের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। প্রধান আলোচক ছিলেন আজকের পত্রিকার সম্পাদক ও সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রেহান উদ্দিন আহমেদ রাজু, সাবেক সহসভাপতি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস জেনারেল ম্যানেজার শাকিল মেরাজ।
অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার (প্রতিটি স্লাইড সম্বন্ধে প্রদর্শনকারী) ছিলেন আন্তর্জাতিক সংস্থা এএফপির ঢাকার ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম। তিনি তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহের কলাকৌশল সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেন।
আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান বলেন, “সাংবাদিকতা সমাজের জন্য একটি আদর্শিক কাজ। যেটা সমাজের কল্যাণে কাজ করে। কিন্তু সাংবাদিকতা সব সময়ের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আইন এমন হবে যা থেকে একজন মানুষ সুবিধা পেতে পারে, কিন্তু এখন এমন আইন তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো জনগণের বিরুদ্ধে চলে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “সংবিধানের ৩৯ ধারায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেওয়া হলেও সংবাদকর্মী আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংবাদপত্রকে কিছুটা হলেও রুখে দেওয়া হয়েছে। এসব আইনের অধীনে বহু সাংবাদিককে বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করে জেলে আটকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যারা এসব আইন প্রণয়ন করেন তারা তো আমাদের ভোটেই নির্বাচিত, তাহলে তাদের কি এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত না? রাজনৈতিক হিংসা ও রেষারেষির জন্যই এই আইনগুলোর অপব্যবহার করা হয়।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যদি আমাদের উপকারে না আসে, তাহলে এগুলো রাখার প্রয়োজনীতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন এই বরেণ্য সাংবাদিক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, “সাংবাদিকতা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। বর্তমানে সত্য কথা বলাটা একটি বিপ্লবের মতো। আমরা আশা করি সংবাদপত্র সব সময় সাংবাদিকতার নীতি মেনে সত্য প্রকাশ করবে। সত্য প্রকাশে সাংবাদিকদের সঙ্গে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। সাংবাদিকতা মানে সত্য প্রকাশ করা। আজ সংবাদপত্রগুলোতে বর্তমানে নেগেটিভ সংবাদপত্রে পরিনত হয়েছে।”
কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা, এগুলো জেনে রিপোর্ট করা আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পাদক চমন আফরোজ রোজী, সাবেক সভাপতি কাজল সিদ্দিকী, এম বোখারী আজাদ জনি, আজিবুল হক পার্থ, ডালিম হোসেন শান্ত ও তাসলিমুল আলম তৌহিদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাবের তিন যুগ পূর্তি উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।
এদিকে বিকাল ৪টায় প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্যদের নিয়ে স্মৃতিচারো এবং সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।
এ সময় সাবেক ও বর্তমান সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
‘আমরা নির্ভীক সত্য লিখবোই’ স্লোগানকে ধারণ করে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। সব বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে তিন যুগ অতিক্রম করল ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠন।