• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

১৬ বছরেও নিজস্ব পোস্টাল কোড পায়নি মনোহরগঞ্জ


কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২, ১১:২৮ এএম
১৬ বছরেও নিজস্ব পোস্টাল কোড পায়নি মনোহরগঞ্জ

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও জোটেনি একটি নিজস্ব পোস্টাল কোড। তাই চাঁদপুর জেলার পোস্টাল কোড দিয়ে চলছে কুমিল্লার এই উপজেলাটির ডাক বিভাগের কার্যক্রম। এছাড়া মনোহরগঞ্জে এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি উপজেলা পোস্ট অফিসের। ফলে একটি শাখা অফিস থেকেই নামমাত্র পরিচালিত হচ্ছে এ উপজেলার ডাক বিভাগের কার্যক্রম।

এদিকে, গত প্রায় ৮ বছর আগে উপজেলা সদরে ডাক বিভাগ একটি ভবন নির্মাণ করলেও এখনও কোনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। শাখা অফিসের মাত্র ৩ জন পিয়ন ও পোস্টাল বিলিকারক দিয়েই চলছে এ উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষের সেবা। এতে সঠিক সেবা না পেয়ে ভোগান্তির কারণে ডাক বিভাগ থেকে সাধারণ মানুষ বিমুখ হওয়ায় সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্বও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জেলার লাকসাম উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করে মনোহরগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলার মধ্যে ১৬টি পোস্ট অফিস রয়েছে। বিকেন্দ্রীকরণের নামে উপজেলা সদরের মনোহরগঞ্জ বাজার, নরহরিপুর বাজার, হাসনাবাদ বাজার, বাইশগাঁও বাজার, দাদঘর বাজার, নোয়াগাঁও, পোমগাঁও বাজার, কাশিপুর বাজার ও আমতলী বাজার নামে এ ৯টি পোস্ট অফিস গত ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তির চিতোষী সাব-পোস্ট অফিসের অধীনে রয়েছে। যার পোস্ট কোড নম্বর ৩৬২৩। অন্যদিকে, উপজেলার লাল চাঁদপুর, ইকবালনগর, লক্ষণপুর বাজার, নাথেরপেটুয়া বাজার, বিপুলাসার বাজার ও ভোগই নামে ৭টি পোস্ট অফিস লাকসাম উপজেলার অধীনে রয়েছে। যার পোস্ট কোড নম্বর ৩৫৭০।

উপজেলার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, উপজেলার ১৬টি পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চাঁদপুর জেলা ও লাকসাম ডাক বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ উপজেলার জরুরি চিঠিপত্র, ব্যাংক ড্রাফটসহ সরকারি-বেসরকারি ডাকবিলি-বণ্টনে গ্রাহকের কাছে পৌঁছতে ৭/১০ দিন পর্যন্ত বেশি সময় লেগে যায়। আবার অনেক চাকরি প্রার্থীর প্রবেশ পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পৌঁছায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার ২/৩ দিন পর।

স্থানীয় ডাক বিভাগের এক কর্মচারী জানান, মনোহরগঞ্জের ১৬টি পোস্ট অফিস দু’জেলার রশি টানাটানিতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে। এ উপজেলায় মারাত্মক জনবল সংকট, পরিবহন ব্যয় বেশি, কোনো অফিসে মূল্যবান কাগজপত্র রাখার সরঞ্জাম নেই এবং অনেক পোস্ট অফিসে পোস্ট মাস্টার ছাড়া কোনো কর্মচারী নেই। বিশেষ করে বিলিকারক, পোস্টম্যান, রানার, পেকারসহ অন্যান্য পদে কোন কর্মচারী না থাকায় ১৬টি পোস্ট অফিসে পোস্টাল কার্যক্রম মারাত্মক সমস্যার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

মনোহরগঞ্জ শাখা পোস্ট অফিসের পোস্টাল বিলিকারক মোবারক হোসেন জানান, উপজেলা পোস্ট অফিসের কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। আর উপজেলার নিজস্ব পোস্ট কোড না থাকায় সাধারণ মানুষের সাথে আমরাও হয়রানির স্বীকার হচ্ছি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমাদের কোনো অফিসেই পর্যাপ্ত জনবল নেই। একটি উপজেলার পোস্ট অফিসে ১ জন পোস্ট মাস্টার, ২ জন পোস্টম্যান, ২ জন রানার, ১ জন পেকার, ১ জন কেরানি, ১ জন ঝাড়ুদার ও ১ জন নৈশপ্রহরী থাকার কথা। কিন্তু এ উপজেলা ডাক বিভাগ একটি ভবন করলেও এখনও কোনো লোকবল নিয়োগ দেয়নি। যার ফলে আমাদের জোড়াতালি দিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. মনজুরুল আলম বলেন, নিজস্ব পোস্ট কোড না থাকায় চাঁদপুর জেলার চিতোষী পোস্ট অফিস ও লাকসাম উপজেলা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে মনোহরগঞ্জের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ইতোমধ্যে মনোহরগঞ্জ উপজেলা পোস্ট অফিস প্রশাসনিক অনুমোদন পেয়েছে। তবে এখনো কোনো পদ সৃষ্টি হয়নি। আমরা পদ সৃষ্টি করে লোকবল নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আর উপজেলা পোস্ট অফিসটি দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করার জন্য সিলমোহরের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সিলমোহর পেলেই শাখা অফিসের লোক দিয়ে এখন উপজেলার কার্যক্রম শুরু হবে। আর উপজেলা পোস্ট অফিস চালু হলে পর্যায়ক্রমে নিজস্ব পোস্টাল কোডও পাওয়া যাবে। নিজস্ব কোড চালু হলে ভোগান্তি দূর হবে।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা বলেন, মনোহরগঞ্জ পোস্ট অফিসের নিজস্ব কোড ও পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু না হওয়ার সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। চলমান সমস্যা সমাধানকল্পে জেলা উন্নয়ন সভায় বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!