• ঢাকা
  • বুধবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২, ১১ সফর ১৪৪৬

‘বিষ মেশানো মিষ্টি এনে দেন মায়ের প্রেমিক’


ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২২, ০৫:২৮ পিএম
‘বিষ মেশানো মিষ্টি এনে দেন মায়ের প্রেমিক’
ছবি: সংগৃহীত

সেই দুই শিশুকে হত্যায় বিষ মেশানো মিষ্টি সরবরাহ করেন তাদেরই মায়ের পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহ বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আনিসুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুরের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার।

পুলিশ সুপার বলেন, “সেই শিশুদের বাবা ইসমাইল হোসেন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। এ অবস্থায়ই তিনি সিলেটে একটি ইটভাটায় কাজ করেন। সেখানে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় শুধু স্লিপ বিতরণ করেন। ১২ বছর আগে তিনি লিমা বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে তিন সন্তান ছিল।”

এসপি আরও বলেন, “সংসারের অসচ্ছলতার কারণে চাতালকলে কাজ শুরু করেন লিমা। সেখানে সর্দার সফিউল্লাহর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সফিউল্লার শর্ত ছিল দুই সন্তান ইয়াছিন (৭) ও মোরসালিনকে (৫) ছেড়ে আসতে হবে, তাহলে তাকে বিয়ে করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন বিকেলে লিমাকে পাঁচ পিস মিষ্টি দিয়ে আসেন সফিউল্লাহ। ওই সময় তিনি বলেন, এই মিষ্টি দুই শিশুকে খাওয়ানোর পর আর কিছু করতে হবে না।”

আনিসুর রহমান বলেন, “নিজেকে মুক্ত করতে প্রেমিকের সঙ্গে মিলে দুই ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন লিমা। এরই অংশ হিসেবে ঘটনার দিন (গত ১০ মার্চ) বাড়িতে এসে বিষ মাখানো মিষ্টি দিয়ে যান সফিউল্লাহ। এরপর পাঁচ পিস মিষ্টি দুই শিশুকে খাওয়ান মা লিমা। এরপরই দুই শিশু অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। পরে হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়।”

এছাড়া ঘটনার দিন লিমা ১৫ বার সফিউল্লাহর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন উল্লেখ করে আনিসুর রহমান বলেন, “ফোনকলের সূত্র ধরেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার কথা। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন লিমা।”

এ ঘটনায় বুধবার দিবাগত রাত ১টায় লিমা বেগমকে উপজেলার দুর্গাপুরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রাতেই শিশু দুটির মা, সফিউল্লাহ ও অজ্ঞাত আরও দুজনকে আসামি করে ইসমাইল হোসেন সুজন একটি হত্যা মামলা করেন। এছাড়া গ্রেপ্তার লিমা বেগম বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট-২য় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলেও জানান পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোল্লা মো. শাহীন ও বিশেষ শাখার ডিআইও-১ ইমতিয়াজ আহম্মেদ।

এর আগে ১০ মার্চ দুপুর থেকেই শিশু মুরসালিন ও ইয়াসিনের জ্বর ছিল। পরে সন্ধ্যায় শিশুদের মা লিমা বেগম তার শাশুড়িকে বাড়ির পাশের দুর্গাপুর বাজারের মাঈন উদ্দিনের ওষুধের দোকান ‘মা ফার্মেসি’ থেকে সিরাপ আনতে বলেন। শিশুদের দাদি সিরাপ এনে লিমার কাছে দেন। এ সময় লিমা তার ছেলেদের সিরাপ সেবন করান। এর কিছুক্ষণ পরই দুই শিশুই বমি করতে শুরু করে এবং অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। অবস্থার অবনতি হলে তাদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে শিশু দুটিকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। বাড়িতে নিয়ে আসার পর রাত ৯টায় ইয়াসিন খানের মৃত্যু হয়। আর রাত সাড়ে ১০টায় ছোট ভাই মুরসালিনেরও মৃত্যু হয়।

এদিকে এত দিন লিমা ছেলেদের মৃত্যুর জন্য সিরাপকে দায়ী করে আসছিলেন। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও সিরাপে ক্ষতিকর কিছু মেলেনি।

Link copied!