সরকারি বরাদ্দে কমতি না থাকলেও জিও ব্যাগ তৈরিতে নিম্ন মানের কাজ, সংখ্যায় কম, অপরিকল্পিতভাবে ডাম্পিং করার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে পাবনার ঈশ্বরদী শহর রক্ষা বাঁধ। জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার পরও থামছে না নদীভাঙন। ইতোমধ্যে নতুন করে ১০ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। কৃষক কোটি টাকার ওপরের ফসল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধটিতে নতুন করে আরও আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও অসময়ে এমন ভাঙন শুরু হওয়ায় নদীপাড়ের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পদ্মা নদীর সাঁড়াঘাট এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট সরেজমিনে পরিদর্শন করে এমন চিত্র মিলেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পদ্মা নদীতে গত বছরের শেষ দিকে ব্যাপক ভাঙন শুরু হলে ভাঙন প্রতিরোধে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে জিও ব্যাগ ফেলানো শুরু হয়। ২৫০ কেজি ওজনের জিও ব্যাগ ফেলা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুবোঝাই এসব জিও ব্যাগ সাঁড়ার বিভিন্ন স্পটে ডাম্পিং করে। পরে আরও এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
পাউবো সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভাঙনকবলিত এলাকায় দুই দফায় সেখানে ৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে পাউবোর জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। প্রথমে ৫টি প্যাকেজে এবং দ্বিতীয় ধাপে ৩টি প্যাকেজে ডাম্পিং করা হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দা, ভাঙনকবলিত জনগণের অভিযোগ, দায়সারাভাবে অপরিকল্পিতভাবে ব্যাগ ফেলানো হয়েছে। আর জিও ব্যাগের সংখ্যাও অনেক কম ছিল। ফলে এসব জিও ব্যাগ ভাঙনরোধে খুব একটা কাজে আসছে না। এর আগে একই স্থানে ব্যাপক ভাঙনে শত শত বিঘা জমি বিলীন হওয়ায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কাজের মান নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা। কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও দায়সারাভাবে প্রকল্পের কাজ হয়েছে। মাঝেমধ্যে ভাঙন হবে আর কিছু জিও ব্যাগ ফেলানো হবে এটা আমরা চাই না। স্থায়ীভাবে নদী রক্ষার করণীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তারা।
স্থানীয়রা বলছেন এখানে মাঝেমধ্যেই ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙন আতঙ্কে এখানে স্থায়ীভাবে ঘর ওঠানো সম্ভব হয় না। সব সময়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আতঙ্কের মধ্যেই কাটাতে হয়। তারা দাবি করেন, বারবার টাকা খরচ করে কাজ হয় না। হয় নয়-ছয়। সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান এখন সময়ের প্রয়োজন।
নদী ভাঙনকবলিত একাধিক কৃষকের অভিযোগ, নদী ভাঙনের কারণে নতুন করে ১০ বিঘা জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ফলে চাষাবাদ করা ফসল ঘরে তুলে আনা সম্ভব হয়নি। প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির দাবি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের।
সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার এ প্রসঙ্গে বলেন, “বিষয়টি জটিল প্রক্রিয়া।”
টেকসই স্থায়ী সমাধান জরুরি দাবি করে তিনি বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয় কি না, সে উদ্যোগে কাজ করতে হবে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, “নদীভাঙন রোধে আমরা সচেষ্ট আছি। মাঝেমধ্যেই ভাঙনরোধে কাজ করা হচ্ছে। নতুন করে আবারও পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, “আমার জানা মতে জিওব্যাগের ডাম্পিংয়ে কোনো অনিয়ম হয়নি।”
যেখানে ডাম্পিং করা হয়েছে, সেখানে ভাঙন হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, “ডাম্পিংস্থলে নয়, অন্য স্থানে ভাঙন হয়েছে। নদী রক্ষায় যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে সেখানে অনিয়ম হয়েছে।”
তার দাবি, নদী রক্ষা বাঁধের কিছু স্থানে ভেঙে পড়ায় পানি প্রবেশ করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান।