কিশোরগঞ্জের আড়িয়াল খাঁ নদের আকার ও প্রবাহ বাড়াতে মাত্র দুই মাস আগে নদটি খনন করা হয়। খনন করতে না করতেই আওয়ামী লীগের নেতার বিরুদ্ধে নদটি ভরাট করে দখলের অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই যুগ আগেও আড়িয়াল খাঁ নদে ব্যাপক প্রবাহ দেখা যেত। গত এক যুগে প্রবাহ কমার পাশাপাশি সংকুচিত হওয়া শুরু করে। বর্তমানে বর্ষাকাল ছাড়া নদটি গতিহীন। এমন বাস্তবতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খননের উদ্যোগ নেয়। খননের নেতৃত্ব দেয় সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এখনো খনন চলমান। যে এলাকায় নদটি ভরাটের অভিযোগ উঠেছে, সেখানে দুই মাস আগে খনন শেষ করে ভৈরব অভিমুখে এগিয়ে গেছে সেনাবাহিনী। খননের পর নদে পানিপ্রবাহ কিছুটা বাড়ে। খননকাজের মাটি রাখা হয় নদ লাগোয়া জমিতে। খননের পর নদে পানির প্রবাহ কিছুটা বাড়ে। তবে এখন কৌশলে সেই জমি থেকে মাটি নদের একটি অংশে ফেলে ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এরই মধ্যে ভরাট করে নদের একটি খাল নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। চোখের সামনে আড়িয়াল খাঁ ভরাট হতে দেখে স্থানীয়দের এখন বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না অবস্থা। নদ ভরাটের কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কটিয়াদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার আহমেদ এবং তার সহযোগী পার্শ্ববর্তী জেলা নরসিংদীর মনোহরদীর কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান। যদিও ভরাটের অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন শাহরিয়ার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহরিয়ার ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে কিছু জমি কেনেন। পরে তিনি এলাকাবাসীর কাছে প্রচার করেন ওই জমিতে তিনি একটি বৃদ্ধাশ্রম, একটি অনাথ স্কুল ও একটি বিনোদন পার্ক বানাবেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এ কাজ করতে গিয়ে তিনি এলাকার নিরীহ মানুষকে চাপ দিয়ে কম দামে কৃষিজমি কিনে নিচ্ছেন।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, ভরাটের কাজে যুক্ত শ্রমিকদের কেউ সেখানে নেই। তবে নদের পাড় ভরাট করার চিহ্ন স্পষ্ট। আগে বীর নোয়াকান্দিতে নদের একটি খাল ছিল, এমন কোনো চিহ্ন এখন আর দেখা যায় না।
এলাকাবাসী আরও জানান, নদের একটি পাশ ভরাট করা হচ্ছে সন্ধ্যার পর। খননের সময় নদের পাশের জমিতে রাখা মাটি দিয়ে পাড় ভরাট করা হয়। নদের ভরাট করে ফেলা খালটি থানা ভবন এলাকা দিয়ে বের হয়ে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের কালী নদে গিয়ে মিশেছিল। সেটি আবার গিয়ে মিলেছে ভৈরবের মেঘনার সঙ্গেও। খালটি দুই মাস আগে ভরাট করা হয়।
শাহরিয়ার বলেন, “আমি ওই এলাকায় প্রায় আড়াই শ শতাংশ জমি কিনেছি। উদ্দেশ্য, বৃদ্ধাশ্রম, অনাথ স্কুল আর বিনোদন পার্ক করা। নিজের জমি রক্ষায় পাড় সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেটি দেখেই মনে হতে পারে, নদ ভরাট করে ফেলা হচ্ছে।”
আবদুল মান্নান বলেন, “আমি আড়িয়াল খাঁ দখলের পক্ষে নই। নদ দখল হতে দেখে তিনি শাহরিয়ার আহমেদের সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছেন।”
জানতে চাইলে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, “আড়িয়াল খাঁ নদের কোথায় ভরাট হচ্ছে, এমন তথ্য তার কাছে নেই।”
নরসিংদী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র সরকার চক্রবর্তী বলেন, “এ বিষয়ে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভালো বলতে পারবেন।”
প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. তানভিরুল হক বলেন, “সরকার অনেক টাকা ব্যয় করে নদী খনন করছে। যদি কেউ নদী দখলের চেষ্টা করে, তা দেওয়া হবে না।”