ঈদে হাট কাঁপাতে আসছে ভিআইপি ষাঁড় ‘তুফান’। হাটে তোলার আগেই নোয়াখালীতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের এক বিশালদেহী ভিআইপি ষাঁড়। যার নাম রাখা হয়েছে ‘তুফান’।
বয়স মাত্র ২৫ মাস, আর ওজনও ২৫ মণ! অগণিত মানুষের কৌতূহল আর আগ্রহে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে ‘ডাক্তার অ্যাগ্রো ফার্মে’। কারণ, শুধু আকারে নয়, আচরণ আর খাদ্যতালিকায়ও এই ষাঁড় যেন একেবারে ভিআইপি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, আসন্ন ঈদুল আজহায় তুফান হতে যাচ্ছে জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানির গরু।
তুফানের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকাও বেশ রাজকীয়। অন্যান্য প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি খায় আপেল, কমলা, মাল্টাসহ নানা পুষ্টিকর ফল।। লম্বায় সাড়ে ৯ ফুট ও ৬ ফুট উঁচু হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুটি নজর কেড়েছে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের।
প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ভিড় করছে তাকে দেখতে। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরুটির দাম ১২ লাখ টাকা হাঁকছেন মালিক আবুল কালাম আজাদ।
জানা যায়, প্রায় ২৪ বছর ধরে নোয়াখালীর এওজবালিয়া ইউনিয়নের করমূল্যা এলাকায় ডাক্তার অ্যাগ্রো নামের খামার পরিচালনা করে আসছেন আবুল কালাম আজাদ। এই খামারেই নোয়াখালীর তুফানের বসবাস।
শখের বশে ৫ মাস আগে চট্টগ্রাম থেকে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান ষাড়টি কিনে এনেছেন তিনি। বর্তমানে ষাঁড়টির বয়স ২৫ মাস হলেও তার ওজনও দাঁড়িয়েছে ২৫ মণে। প্রতিমাসে এক মণের বেশি ওজন বাড়ে তুফানের।
প্রতিবেশী দেলোয়ার হোসেন ঢাকা বলেন, বিশাল আকৃতির গরু তেমন আমাদের গ্রামে দেখা যায় না। তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এই তুফানকে দেখতে আসছে। দর-দামে এখনও মিলছে না। তবে ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে ক্রেতারা তুফানকে দেখতে ভিড় করবে। আমরাও চাই মালিক যেন ন্যায্য দামে গরুটিকে বিক্রি করতে পারেন।
খামারের মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি একজন ফিজিশিয়ান ডাক্তার। প্রায় ২৪ বছর আগে এখানে আমি খামার স্থাপন করি। সবাই ডাক্তার এগ্রো নামেই চিনে। আমার এখানে এবার আলোচিত গরু হলো তুফান। তার আচরণের কারণেই আমার ছেলে তুফান নাম রেখেছে। শখ করে মাত্র পাঁচ মাস আগে চট্টগ্রাম থেকে গরুটিকে কিনে এনেছি। তখনই বুঝেছিলাম, এটি সাধারণ গরু নয়। প্রতিমাসে ১ মণের বেশি ওজন সে লাভ করে। বর্তমানে তার স্বভাব অনেক ঠান্ডা হয়েছে। এক নজর তুফানকে দেখতে মানুষ ভিড় করে।
তিনি আরও বলেন, তুফানকে আমরা প্রাকৃতিক উপায়ে বড় করেছি। খাবার হিসেবে প্রতিদিন দেওয়া হয় ঘাস, কলাইয়ের ডাল, খৈল, গাজর, ভুসি এবং ফলমূলের মধ্যে আপেল, কমলা ও মাল্টা। তার পেছনে প্রতিমাসে ৫০-৫৫ হাজার টাকার খাবার যায়।
আমি সব প্রাকৃতিক খাবার দিই। তার পরিচর্যায় আছে আলাদা লোক, নিয়মিত গোসল করানো হয় ও পরিচ্ছন্ন রাখা হয় পরিবেশ। একজন ক্রেতা ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। তবে এখনও বিক্রির সিদ্ধান্ত নিইনি। সামনে কোরবানির হাটে তুললে দাম আরও বেশি হতে পারে বলেও অনেকে বলছেন। তবে ষাড়টি যদি প্রজননের জন্য রাখা যায় তাহলে আমাদের দেশ অনেক উপকৃত হবে।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাসলীমা ফেরদৌসী ঢাকা বলেন, সম্ভবত এটাই জেলার সবচেয়ে বড় গরু। তার ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তুফান প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠলেও তার সঠিক পরিবেশ এখানে নেই। যদি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা যায় তাহলে আবুল কালাম আজাদ সফল খামারি হবেন। আমরা তাকে সব সময় পরামর্শ দিয়ে থাকি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ছোট-বড় সব আকারের গরু পালনকারীদের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করছে। এবছর জেলায় চাহিদার বেশি কোরবানির পশু রয়েছে। আমরা আশা করি খামারিরা লাভবান হবেন। হাটে গরু কেনার পাশাপাশি খামারে লাইভেও গরু কেনায় মানুষের আগ্রহ রয়েছে।