• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চামড়া নিয়ে বিপাকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৩, ০৩:৩৩ পিএম
চামড়া নিয়ে বিপাকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন টাঙ্গাইলের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। বাজারে পর্যাপ্ত চামড়া থাকলেও মিলছে না ক্রেতার দেখা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বৃহত্তর চামড়ার হাট ঘাটাইলের পাকুটিয়ায় কোরবানির ঈদের সময় কোটি টাকার চামড়া বেচা-কেনা হয়ে থাকে। তবে এবার এই হাটে তেমন বেচা-বিক্রি নেই।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, গ্রামে গ্রামে গিয়ে সামাজিকভাবে কোরবানি দেওয়া গরুর চামড়া প্রতি পিস ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে কেনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সেগুলো পরিস্কার করে লবণ মাখিয়ে রোববার (২ জুলাই) সকালে পাকুটিয়ার চামড়ার হাটে ওঠানো হয়। সেদিন অধিকাংশ পাইকার হাট থেকে চামড়া কেনেননি। কয়েকজন কিনলেও আকার ভেদে চামড়ার দাম দিয়েছেন প্রতি পিস ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, চামড়া কেনার পর তা পরিস্কারের পর লবণ দিয়ে বিক্রি যোগ্য করতে ৬০০টাকার বেশি খরচ পড়ে। এদিকে পাইকাররা চামড়ার দাম বলছেন ৩০০-৫০০ টাকা। এই দামে বিক্রি করলে অনেক বড় লোকশানে পড়তে হবে তাদের। তাই বিক্রি না করে আগামী হাটের জন্য চামড়া রেখে দিয়েছেন।

আজগর আলী নামের এক চামড়া ব্যবসায়ী জানান, তিনি গ্রামাঞ্চল থেকে মাঝারি আকারের ৬০টি গরুর চামড়া প্রতি পিস ৪৫০টাকা দরে কিনে লবণ দিয়েছেন। রোদ না থাকায় শুকানো সম্ভব হয়নি। বিক্রি করতে চাইলে পাইকার ও আড়তদাররা প্রতি পিস ৫০০ টাকা দাম বলছেন। 

মোস্তফা জামান নামের আরেক মৌসুমি ব্যবসায়ী বলেন, তিনি বড় আকারের ১২ পিস চামড়া ৮০০ টাকা দরে কিনে প্রাথমিকভাবে লবণ মাখিয়েছেন। পাকুটিয়ার চামড়ার হাটে আনার পর পাইকাররা প্রতি পিস ৯০০টাকা দাম বলছেন।

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন টাঙ্গাইল জেলায় ৬০-৬৫ হাজার পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে লবণ দিয়ে পাকুটিয়া হাটে নেওয়া হয়। রোববার (২ জুলাই) পাকুটিয়ার চামড়ার হাটে অধিকাংশ চামড়া বিক্রি না হওয়ায় আড়তে এনে আবার লবণ মাখিয়ে ডাবর (লবণ দিয়ে স্তুপ করা) দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রাখা হয়েছে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে সেগুলো ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে পাঠানো হবে।

তারা আরও জানান, টাঙ্গাইলে পিস হিসেবে চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে। জেলার প্রতিটি গ্রামে একাধিক সমাজব্যবস্থা রয়েছে। পৃথকভাবে পশু কোরবানি দেওয়া হলেও চামড়াগুলো একত্রে সামাজিকভাবে বিক্রি করা হয়। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা অনেকটা কম দামে চামড়া সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছ থেকে কিছুটা মুনাফা নিয়ে বিক্রি করেন। গ্রামাঞ্চলের চামড়াগুলোর দাম কিছুটা কম থাকে। কারণ গ্রামাঞ্চলে কোরবানি দেওয়া গরুর আকার সাধারণত ছোট হয়। শহরাঞ্চলে বড় গরু কোরবানি দেওয়া হয় বলে দামও কিছুটা বেশি।

আড়তদার আহাম্মদ আলী ও আলী হোসেন বলেন, ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ধরা হয়েছে ৪৫-৪৮ টাকা, যা গতবার ছিল ৪০-৪৪ টাকা। তবে গরুর চামড়ার দাম বাড়লেও খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা। আর বকরির চামড়া ১২-১৪ টাকায় অপরিবর্তিত নির্ধারণ করা হয়। 

জেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৩টি কোরবানির মধ্যে ১ লাখ ১২ হাজার ৫৮১টি ছাগল ও ৪ হাজার ৪১টি ভেড়া রয়েছে। 

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, ছাগলের চামড়া ৬০-৬৫ হাজার বেচাকেনা হয়েছে। অন্যগুলো মাঝারি আকারের গরুর চামড়ার সঙ্গে ফ্রি দিতে হয়েছে অথবা ফেলে দিতে হয়েছে। ভেড়ার চামড়া ২০-২৫টি সংগ্রহ করা হয়েছে। অন্যগুলো ফেলে দেওয়া হয়েছে।

পাকুটিয়া চামড়ার হাটের ইজারাদার রাকিব খান বলেন, “এ বছর প্রায় ৩২ লাখ টাকায় হাটের ইজারা নিয়েছেন। কোরবানির প্রথম হাট হিসেবে চামড়ার আমদানি হলেও বিক্রির সংখ্যা খুবই কম। ফড়িয়ারা কিছু চামড়া কিনে বিক্রি করতে না পেরে হাটের গোডাউনে ডাবর (লবণ দিয়ে স্তুপ করা) দিয়ে রেখে গেছেন। হাটে বেশিরভাগ আড়তদার আসেননি। প্রায় হাটেই ঢাকা থেকে কোম্পানি বা ট্যানারির প্রতিনিধিরা আসেন, এবার তারাও আসেননি। বাজারের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে গত বছরের ন্যায় এবারও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়বেন।”    

জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রানা মিয়া জানান, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৩টি কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৬৪১টি। চামড়ার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখভাল করে থাকে।”

Link copied!