• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কুড়িগ্রামে কমছে নদ-নদীর পানি, কমেনি দুর্ভোগ


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩, ০২:৫৯ পিএম
কুড়িগ্রামে কমছে নদ-নদীর পানি, কমেনি দুর্ভোগ

কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর পানি থেকে কমতে শুরু করেছে। তিস্তা নদীর পানি টানা ৭ দিন বিপৎসীমার ওপরে থাকার পর শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকে সরেনি পানি। ফলে বিশুদ্ধ পানি আর রান্না করা খাবারের সংকটে রয়েছেন ৫ উপজেলার প্রায় ৭ হাজার পরিবারের পানিবন্দী মানুষজন।

চিলমারীর নয়ারহাট ও শাখাহাতির চরে তীব্র ভাঙনে দুই দিনে ৬০-৮০টি বসতভিটা ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়ে গেছে। এখানকার লোকজন বাড়িঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

জেলার কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী, নাগেশ্বরী, রাজারহাটের নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলগুলোর ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, গোচারণ ভূমি এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। তিস্তার পাড়ে নদী ভাঙন কিছুটা কমলেও, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

বানভাসি এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, লোকজন বাঁচার তাগিদে ঘরের মধ্যে মাচা করে, কেউবা গোয়ালঘরে, কেউ কেউ নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দী হয়ে লোকজন এখনো দুর্ভোগে দিন পার করছেন। টিউবওয়েলগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় চরম সংকট দেখা দিয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির। পাশাপাশি শুকনো খাবার খেয়ে কোনোমতে দিন পার করছেন এসব বানভাসিরা। রান্না করার চাল-সবজি থাকলেও রান্নার জ্বালানির অভাবে রান্না করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের বাসিন্দা হাসান আলী জানান, “কোনোরকমে ঘরের মধ্যে মাচায় বউ বাচ্চা নিয়ে আছি। ঘরের চারপাশের পানির জন্য ঘরে থাকারও উপায় নাই।”

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা রওশনারা বেগম বলেন, “দুই দিন থেকে কোনোমতে শুকনা চিড়্যা খায়া আছি। আজ উঠান থাকি পানি কমতেছে। ২ ঘর মিলি ভাত রানলং। চুলাত যে তিন বেলা ভাত বসামো খড়ি তো নাই।”

এই চরের আরেক বাসিন্দা মোন্নাফ আলী বলেন,‍‍ ‘৩টা ঘর, তিনটা ঘরতে পানি উঠছে। ঘরের সামনের গোয়ালঘর কোনা উঁচু করা। পরিবার নিয়া গরু,মানুষ একসঙ্গে আছি । সকাল থাকি পানিত একনা টান ধরছে,আল্লাহ রহমত করলে পানি কমলে আমার কষ্ট শ্যাষ হইবে।‍’

শাখাহাতি চরের বাসিন্দা জহুরা বেগম বলেন, “গতকাল আমার ৪টা ঘর ভাঙি নদিতে চলে গেছে। গতকাল রাতে এইখানে নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নিচে ছিলাম।”

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় তৃতীয় ধাপের বন্যায় ১৮ হাজার ৬২৬ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে ৭৯৮টি, ৫ হাজার ৬৮৩ হেক্টর আবাদি জমি নষ্ট হয়েছে।”

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার, দুধকুমার পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শুক্রবার সকাল থেকে কুড়িগ্রামের সবগুলো নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বানভাসী মানুষের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে যথেষ্ট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সেগুলোর বিতরণের কাজ চলছে। এ ছাড়া ১৮টি স্থায়ী ও ৩৬১টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে যাতে বানভাসীদের কোনো দুর্ভোগ না হয়। বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্পিডবোট নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

Link copied!