• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

আশ্রয়ণ প্রকল্পে নার্সারি করে স্বাবলম্বী ফাতেমা


হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০১:৫০ পিএম
আশ্রয়ণ প্রকল্পে নার্সারি করে স্বাবলম্বী ফাতেমা
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের বারান্দায় ও উঠানে ফলজ বৃক্ষ ও সবজি নার্সারি। ছবি : প্রতিনিধি

ফাতেমা বেগম ও রঞ্জু মিয়া দম্পতি একসময় ছিলেন ভূমিহীন। তখন খুব কষ্টে দিন কাটতো তাদের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে বদলে গেছে এই দম্পতির জীবন। এক সময়কার ভূমি ও গৃহহীন ফাতেমা বেগম এখন একজন নারী উদ্যোক্তা। নার্সারির ব্যবসা করে তিনি সংসারের হাল ধরেছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফাতেমা বেগম টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার পৌর শহরের শিয়ালকোল ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাওয়ার আগে তারা অন্যের জায়গায় বসবাস করতেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের বারান্দায় ফাতেমা চাষ করেছেন ফলজ বৃক্ষ ও সবজি নার্সারি। ছোট এ নার্সারিতে ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির চারা রয়েছে।

নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা বেগম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘরের বারান্দা ও উঠানের সামনের জায়গা পতিত না রেখে চিন্তা করলাম ছোট পরিসরে একটি নার্সারি বাগান করা যায় কি না। পরে স্বামীর সহযোগিতায় নার্সারি করি। প্রথমে অল্প প্রজাতির চারা নিয়ে শুরু করি। বর্তমানে ২০-২৫ ধরণের চারা রয়েছে।”

ফাতেমা বেগম আরও বলেন, প্রতিদিন এসব বিক্রি করে প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করছেন। আগে অভাবের সংসার থাকলেও বর্তমানে ভালোভাবে চলতে পারছেন তারা। সন্তানরা ঢাকায় চাকরি ও রাজমিস্ত্রীর কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর ও জায়গা না পেলে ভাগ্য বদল হতো না।

ফাতেমা বেগমের স্বামী রঞ্জু মিয়া বলেন, “ভূমিও গৃহহীন থাকায় আগে হতাশায় দিন কাটাচ্ছিলাম। পরে ঘরের জন্য আবেদন করলে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন স্যার ও পিইআইও জহিরুল ইসলাম স্যার যাচাই-বাছাই করে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ব্যবস্থা করে দেন। এই ঘর উপহার পেয়ে অনেক ভালো আছি পরিবার নিয়ে। আমার স্ত্রী ঘরের বারান্দায় ও সামনে উঠানে চারা লাগিয়েছে। তাকে কাজে সহযোগিতা করি। এখন আমাদের সংসার আগের থেকে অনেক ভালো চলছে।”

সরেজমিনে উপজেলা পৌর শহরের শিয়ালকোলের ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘুরে দেখা গেছে, এখানে ১২টি পরিবার বসবাস করছেন। এখানকার বাসিন্দারা কেউ সেলুন দোকান করেছেন, কেউ দর্জির কাজ করছেন, কেউ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। কেউ প্রকল্পের উঠানে সবজি চাষ করেছেন। সবাই পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে সুখেই আছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, ভূঞাপুর পৌরসভার শিয়ালকোল এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১২টি পরিবার বসবাস করছে। এরমধ্যে ফাতেমা নামে এক উপকারভোগী নারীকে নার্সারি বাগান করতে উৎসাহ প্রদান করলে তিনি তা করেন। চারা বিক্রি করে নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা স্বাবলম্বী হয়েছেন।

জহুরুল ইসলাম আরও বলেন, “আমরা তাদের সমিতির মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করি। যিনি যে পেশায় যেতে চান, তাদের সহযোগিতা করি। শুধু ফাতেমাকেই নয়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকজনকে মুদি দোকান, সেলুনের দোকান, ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান দেওয়া হয়েছে। আরেক নারীকে সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়। এসব বাসিন্দারা এখন সুন্দরভাবে পরিবার নিয়ে জীবন-যাপন করছেন। ফলে তাদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। আমরা তাদের সার্বিকভাবে সব সময় সহযোগিতা করি।”

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গৃহ ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আধাপাকা ঘর উপহার হিসেবে প্রদান করে সরকার। যে নারী উদ্যোক্তা হয়ে নার্সারি করেছে তা প্রশংসনীয়। আশ্রয়ণে যারা বসবাস করছে তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। 

Link copied!