দুবাইয়ের একটি সোনার দোকানের উদ্বোধন নিয়ে হঠাৎ করেই দেশে চলছে তোলপাড়। বুধবার ওই দোকানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন চিত্রপরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস। আরও ছিলেন আলোচিত ইউটিউব তারকা হিরো আলম। তবে আয়োজনের সবচেয়ে বড় নাম ছিল সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার অবশ্য মঞ্চে ওঠেননি। তবে আলোচনার কারণ অবশ্য সোনার দোকানের মালিক আরাভ খান। ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই অবস্থান করলেও আরাভ খান আসলে বাংলাদেশি নাগরিক। তার নাম রবিউল আলম আপন। তিনি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মো. মামুন এমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি।
আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম আপনের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামে। দুবাইয়ে স্বর্ণ ব্যবসা করে তার কোটিপতি বনে যাওয়ার খবরটি দেড় সপ্তাহ আগেই ছড়িয়ে পড়েছে আশুতিয়া গ্রামে।
আপনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাকা ওয়ালের টিনশেডের বাড়িটি তালাবদ্ধ। পরে বাড়ির পাশে একটি চায়ের দোকানে গেলেই দেখা মেলে আপনের কয়েকজন বাল্যবন্ধু ও প্রতিবেশীর সঙ্গে। তাদের ভাষ্যে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আপনের একজন প্রতিবেশী জানান, আপনের বাবার নাম মতিউর মোল্লা। তিনি একসময় খুলনায় থাকতেন। জীবিকার তাগিদে কোটালীপাড়ায় এসেছিলেন। মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। মতিউরের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে আপন বড়। ক্লাস সেভেনে ফেল করার পর আপন জড়িয়ে পড়েন নানা অপকর্মে। পরে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকায়। ১০ বছর আগে একবার আপন গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর আর তাকে গ্রামে আসতে দেখেনি কেউ।
দুবাইয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানই কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের আপন মোল্লা, বিষয়টি নিশ্চিত করেন হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না। তিনি বলেন, “প্রায় এক যুগ আগে আপন একবার বাড়ি এসেছিল। এরপর তাকে গ্রামে আর দেখা যায়নি। তাই তার সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানতাম না। তবে কিছুদিন আগে ফেসবুকে দেখে আমরা এলাকাবাসী অবাক হই। বিদেশে গিয়ে নাম বদলে আরাভ খান হলেও আমরা তাকে দেখে চিনে ফেলি। সে মতিউর জেলের ছেলে আপন মোল্লা।”
জানা যায়, ২০১৮ সালে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) স্কুল অব ইন্টেলিজেন্স পরিদর্শক মামুন ইমরান খানকে (৩৪) পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। সেই হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি আরাভ খান।
মামুন হত্যার ঘটনায় তার ভাই বনানী থানায় ২০১৮ সালের ১০ জুলাই একটি মামলা করেন। এই মামলায় ২০১৯ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। সেখানে আরাভের নাম আছে। মামলার এজাহার অনুযায়ী আরাভের আসল নাম রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। মামলায় আপনের ঠিকানা গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ হত্যা মামলার সাজা থেকে বাঁচতে আরাভ এঁকেছিলেন বাংলা সিনেমা আয়নাবাজির ছক। আবু ইউসুফ লিমন নামে এক তরুণকে বিকেএসপিতে খেলার সুযোগের প্রলোভন দেখান আরাভ। এই প্রলোভনে পড়ে লিমন আদালতে আরাভের বদলে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত লিমনকে কারাগারে পাঠায়। এই ফাঁকে আরাভ ঊর্ধ্বতন এক সরকারি কর্মকর্তার সহায়তায় নকল পাসপোর্ট বানিয়ে দেশ ত্যাগ করেন। পরে এ বিষয়টি জানাজানি হলে লিমনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হয়।
দুবাইয়ের আরাভ খানই পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যার ৬ নম্বর পলাতক আসামি বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মতিঝিল বিভাগ নিশ্চিত করেছে। ডিবি জানায়, পুলিশের জমা দেওয়া অভিযোগপত্রেও তাকে পলাতক আসামি দেখানো হয়েছে।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে আপনকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
                
              
																                  
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    




































