• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

পাহাড়জুড়ে পাকা ধানের সোনালি হাসি


জীতেন বড়ুয়া, খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২২, ০৮:২৮ এএম
পাহাড়জুড়ে পাকা ধানের সোনালি হাসি

খাগড়াছড়ির পাহাড়ের উঁচু-নিচু জমিতে থোকায় থোকায় ঝুলছে সোনালি রঙের ধান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন সবুজের বুকজুড়ে সোনালি ধানের হাসি। জুমের সোনালি পাকা ধানে ছেয়ে গেছে পাহাড়ের পর পাহাড়।

অনুকূল আবহাওয়া ও নিয়মিত পরিচর্যার কারণে এবার খাগড়াছড়ির জুমে ভালো ফলন হয়েছে। জুমে জুমে এখন চলছে ধান কাটার উৎসব। ধান ছাড়াও বাহারি সবজির চাষ হয়েছে জুমে। পার্বত্য খাগড়াছড়ির সব কটি পাহাড়ের উঁচু-নিচু জমিতে থোকায় থোকায় ঝুলছে সোনালি রঙের ধান।

খাগড়াছড়ির গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, লক্ষ্মীছড়ি, মহালছড়ি, দীঘিনালা, পানছড়ি ও রামগড় উপজেলায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস জুমচাষ। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর কিছু ফসল তারা বাজারে বিক্রি করে বাড়িত টাকা আয় করেন। 

জুমিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে শুরু হয় জুম লাগানোর প্রক্রিয়া। প্রথমেই পাহাড়ে আগুন দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করা হয়। তারপর জমি খনন করে বীজ বপন করা হয়। বীজ লাগানোর ৩ থেকে ৪ মাস পরিচর্যার পর সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিক থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে জুমিয়ারা। ধান কাটা শেষ হয় অক্টোবরে। হলুদ, মারফা, আদা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়ো, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ বিভিন্ন জাতের সবজির চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। জুমে উৎপাদিত খাদ্য শস্য দিয়েই চলে জুমিয়াদের সংসার।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জুমিয়ারা জানান, পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় এখন পাকা ধান শোভা পাচ্ছে। কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাহাড়ে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। সবুজ পাহাড়ের ধান ছাড়াও জুমে প্রায় ৪০ জাতের সবজির চাষাবাদ হয়েছে। জুমের উৎপাদিত ধান দিয়ে ৬-৯ মাস পর্যন্ত খাবারের যোগান পান জুমিয়ারা।

পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলছে উৎসবের আমেজ। ঘরে ঘরে চলছে জুম কাটার উৎসব। পরিবারের সবাই জুমের ধান কাটতে ব্যস্ত। ফসল ঘরে তুলতে সকাল-দুপুর ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সকাল থেকে জুমে জুমে ধান কাটছেন জুমিয়ারা। ধান কাটা শেষে জুমঘরে তা মাড়াই করছেন। তবে খরচের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশী বলে দাবি জুমিয়াদের। জুম চাষে সার-বীজের পাশাপাশি সরকারিভাবে প্রণোদনা দাবি করেছেন তারা।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার আলুটিলা এলাকার জুম চাষি শ্যামল মিত্র চাকমা বলেন, “আমরা জুমের ওপর নির্ভরশীল। ধান ছাড়া হলুদ, মারফা, ভুট্টাসহ নানা ধরনে সবজির আবাদ করেছি। এবার আমাদের ভালো ধান হয়েছে। ধান ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেছি। গতবারের তুলনায় এবার ভালো ফলনও হয়েছে। বৃষ্টিও ভালো হয়েছে তাই ধান ভালো হয়েছে। কিন্তু আমরা সরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাই না।”

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর খাগড়াছড়িতে ১ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে জুমচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ১ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে জুম চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৬১১ মেট্রিক টন। তবে ফলনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। খাগড়াছড়িতে জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল অন্তত ৫ হাজার কৃষক।

জুমে উৎপাদন বাড়াতে সনাতনী জুমের পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে জুম চাষ করার ওপর জোর দিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। জুমের ফলন বাড়াতে গবেষণা করছে পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। আধুনিক পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব জুম চাষ করলে জুমে উৎপাদন বাড়বে বলে জানিয়েছেন পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, খাগড়াছড়ির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন।

আলতাফ হোসেন বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে মাটিতে রক্ষণশীল পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হবে। অতিরিক্ত খাড়া পাহাড়ে চাষ করা যাবে না। যেসব ফসল চাষে অতিরিক্ত খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয় তা চাষ করা যাবে না। মাটির ক্ষয়রোধ করা গেলে উর্বরতা বাড়বে এবং জুমের ফলনও বাড়বে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার জানান, এবার জেলায় বৃষ্টিপাত ভালো হওয়ায় জুমের ফলন ভালো হয়েছে। জুমচাষিরাও সরকারি প্রণোদনার আওতায় এসেছেন। 

Link copied!