রুশ বাহিনীর হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহ ভূইয়া (২০)। তার এক সহযোদ্ধা মোবাইলে হাবিবুল্লাহ‘র পরিবারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
হাবিবুল্লাহ শিবপুর উপজেলার আয়ুবপুর ইউনিয়নের ঘাসিরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবু সিদ্দিক ভূইয়া ও মানসুরা বেগমের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে হাবিবুল্লাহ সবার ছোট।
নিহতের পরিবার জানায়, এইচএসসির গন্ডি পার হওয়ার পরেই ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন হাবিবুল্লাহ। পরে একই উপজেলার ব্রাহ্মন্দী গ্রামের ফারুকের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে হাবিবুল্লাহকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দালাল ফারুকের মাধ্যমে ঢাকার শফিক নামে আরেক দালাল হাবিবুল্লাহকে ওমরা ভিসায় সৌদি আরব নিয়ে যান। সেখানে দুই মাস অবস্থান করিয়ে তুরস্ক হয়ে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাশিয়ায় প্রবেশের সময় ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন হাবিবুল্লাহ। সেখান থেকে শফিক তাকে ছাড়িয়ে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে সুলতান নামে আরেক দালালের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে সুলতান রাশিয়ান সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে পরিস্কার পরিচ্ছনতার কাজের কথা বলে রাশিয়ান ভাষায় লেখা এক চুক্তিপত্রে তাকে স্বাক্ষর করিয়ে ক্যাম্পে রেখে আসেন।
সেখানে তাকে সেনাবাহিনীর ট্রেনিং দেওয়া হয়। পরে সে বুঝতে পারে তাকে ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। গত ২৭ মার্চ রাশিয়ান বাহিনীর ৪৫ জন সদস্যের সঙ্গে ইউক্রেনের একটি যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ শেষে তারা একটি রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এসময় ইউক্রেনীয় বাহিনী এসে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় হাবিবুল্লাহসহ সবাই মারা যান। বুধবার (৩০ এপ্রিল) হাবিবুল্লাহর পরিবারকে এ তথ্য জানায় হাবিবুল্লাহর সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি আরেক তরুণ।
হাবিবুল্লাহর বন্ধু নাইম ইসলাম অভি বলেন, “রাশিয়ায় যাওয়ার পর মাঝে মধ্যে ওর সঙ্গে আমার কথা হতো। তখন সে জানায় দালালরা তাকে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে রাশিয়ায় নিয়ে গেছে। সেখানে তাকে অনেক অত্যাচার করা হয়। অবশেষে সে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে গিয়ে মারা গেল। আমরা এরজন্য দায়ীদের বিচার চাই।”
হাবিবুল্লাহর বড় ভাই ওয়ালি উল্লাহ বলেন, “আমার ভাইকে ইতালি নিয়ে যাবে এ জন্য দালালের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকা চুক্তি হয়৷ পরে সে ইতালি না নিয়ে রাশিয়ার কাছে আমার ভাইকে বিক্রি করে দিছে। সেখানে কিছুদিন আগে শুনতে পাই আমার ভাই ইউক্রেনের যুদ্ধে মারা গেছে। আমি প্রশাসনের কাছে আমার ভাইকে ফেরত চাই।”
এদিকে পরিবারের সবার ছোট ছেলের মৃত্যুর সংবাদে নির্বাক হয়ে পড়েছে বাবা-মা। আদরের সন্তানের এই নির্মম পরিণতি তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
নিহতের বাবা আবু সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, “ছেলে আমার ইতালি যাওয়ার জন্য পাগল ছিল। কিন্তু দালালরা রাশিয়ায় নিয়ে ছেলেকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। তাদের টাকার প্রয়োজন হলে আমাদের কাছে চাইলেও কষ্ট করে টাকা দিয়ে ছেলেকে বাঁচাতাম। আমার ছেলেকে মৃত্যুর মুখে ফেলে রেখে চলে আসে। অবশেষে গুলিতে সে মারাই গেল। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।”
হাবিবুল্লাহর মা মানসুরা বেগম বলেন, “ছেলে বারবার দেশে ফিরে আসার জন্য কান্নাকাটি করলেও আমরা কিছুই করতে পারিনি। ছেলে সেখানে অনেক অত্যাচার ও কষ্ট সহ্য করেছে। ছেলেকে এত টাকা খরচ করে পাঠিয়েছিলাম ইউরোপে আর দালালরা পাঠিয়ে দিল যুদ্ধক্ষেত্রে। এই দালালরা অনেক মায়ের বুক খালি করেছে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”
নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “এ বিষয়ে পরিবার থেকে আমারা একটা দরখাস্ত পেয়েছি। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”