• ঢাকা
  • রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬

তিন ইঞ্জিনিয়ারের চায়ে মজেছে দিনাজপুরবাসী


বিজন কুমার, দিনাজপুর
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০৯:১৩ এএম
তিন ইঞ্জিনিয়ারের চায়ে মজেছে দিনাজপুরবাসী

শুরুটা গত বছরের ২২ নভেম্বর। দিনাজপুরের তিন যুবক শুরু করেছেন ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকান। নাম গ্রাজুয়েট চা ওয়ালা। বর্তমান ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নামে ক্ষেত্রে এমন নামকরণ একটু ব্যতিক্রমীই বটে। দুই মাসের মধ্যে রীতিমত তাদের চায়ের স্বাদ আর তাদের বিনয়ী আচরণে সাড়া ফেলেছে দিনাজপুরে। তাদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকল স্তরের মানুষ।

সরেজমিনে দিনাজপুর গোর এ শহীদ বড় ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, কৌতূহলী ক্রেতার ভিড়ে জমে উঠেছে চা দোকানের বেচা-কেনা। একদিকে কেউ চা তৈরি করছেন। অন্যদিকে কেউ চা পরিবেশন করছেন। যেন দম ফেলবার ফুসরত নেই তাদের। শুরু দিকে হাতে হাতে চায়ের টাকা লেনদেন হলেও বর্তমানে ক্রেতাদের টোকেন নিয়ে চায়ের স্বাদ গ্রহণ করতে হচ্ছে। এখানে প্লাস্টিক এবং মাটির তৈরি কাপে চা খাওয়ার সুবিধাও রয়েছে। একটু ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা গেল চায়ের দোকানের পেছনে। চা পানের পর এখানে রয়েছে নিজের মন্তব্য লেখার জন্য একটি বোর্ড। অনেকেই চা খাওয়ার পর কাগজে নিজের মন্তব্য লিখে বোর্ডে আঠা দিয়ে বসিয়ে দিচ্ছেন। বড় ময়দানে সময় কাটাতে আসা ব্যক্তিদের কাছে এই দোকানের চা বেশ জনপ্রিয়।

কথা বলে জানা যায়, উদ্যোক্তা তিন যুবক সুজন, সাইফুল ও রানার বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়। তারা সকলেই দিনাজপুর এস আর এ পলিটেকনিকেল ইনস্টিটিউটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়ালেখার সুবাদে বর্তমানে দিনাজপুরেই থাকছেন তারা। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে তাদের বেচাকেনা। বর্তমানে তাদের রয়েছে চার প্রকারের চায়ের আয়োজন। এরমধ্যে গ্রাজুয়েট স্পেশাল চা (প্লাস্টিকের কাপ) ১৫ টাকা, গ্রাজুয়েট স্পেশাল ক্লে কাপ চা (মাটির কাপ) ২০ টাকা, হরলিক্স ও চকলেট চা ৩০ টাকা এবং জাফরান চা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। বিক্রেতা যুবকরা জানান, প্রতিদিন তাদের দোকানে প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ কাপ চা বিক্রি হয়। আর গড়ে বিক্রি প্রায় সাড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। শুক্রবার ছুটির দিনে বিক্রির পরিমাণ আরও বেশি বলে জানিয়েছেন এই উদ্যোক্তারা।

চা পান করতে আসা রিয়া মণি বলেন, “মাঠে ঘুরতে এসে গ্রাজুয়েশন চা খেলাম। এই চায়ের স্বাদ সত্যি খুব অসাধারণ। তাদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।”

মারুফ আহম্মেদ নামে এক যুবক বলেন, “একদিন ফেসবুকে দেখেছি এখানে তিনজন ইঞ্জিনিয়ার নাকি চা বানাচ্ছেন। সত্যি অবাক করার মতো। তাই এখানে আসা। এ পর্যন্ত ১০ বারের ওপর এখানে আসা হয়েছে। বড়মাঠে আড্ডা দিতে এলেই এখানে আসা হয়। আর এত কম দামে এত সুন্দর চা পাওয়া আজকের বাজারে অনেক কঠিন।”

কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে আসা কণিকা মণ্ডল বলেন, “আমি দিনাজপুরে একটি ট্রেনিং (প্রশিক্ষণ) নিতে এসেছি। আমার অফিসের সহকারীদের কাছে শুনেছি, ‘দিনাজপুরে গ্রাজুয়েট চা পাওয়া যাচ্ছে’। তাই এই বড় মাঠে আসা। এটা সত্যি খুব ভালো লাগল।”

গ্রাজুয়েট চা বিক্রেতা সুজন বলেন, “একটু ভিন্নধর্মী চিন্তাধারা থেকে আমাদের গ্রাজুয়েট চায়ের যাত্রা শুরু। এই উদ্যোগ গ্রহণের আগে আমাদের অনেক ঝামেলা কাঁধে নিতে হয়েছে। কারণ সকল পরিবারের স্বজনরা চায় তাদের সন্তান পড়ালেখা করে ভালো চাকরি করুক। এছাড়াও সমাজ কী বলবে তার চিন্তা ছিল। সর্বোপরি সব উপেক্ষা করে আমরা এই চায়ের দোকান খুলি। আমরা মনে করি কোনো কাজই ছোট নয়। বর্তমানে আমরা সাড়া ভালো পাচ্ছি। সকলের দোয়ায় অনেক দূরে যাব ইনশাআল্লাহ।”

চা বিক্রেতা রানা বলেন, “বর্তমানে যেভাবে আমাদের দেশ চলছে, অনেক শিক্ষিত মানুষ বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে যায়গায় আমরা যদি চাকরি না খুঁজে চাকরি দেওয়ার চিন্তায় থাকি তবে অবশ্যই আমরা উন্নত হতে পারব। আসলে সেই চিন্তাধারা থেকে এই গ্রাজুয়েট চা দোকান শুরু করি। বর্তমানে আমাদের দৈনিক প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ কাপ চা বিক্রি হচ্ছে। আর গড়ে বিক্রি প্রায় হচ্ছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।”

Link copied!