• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২, ১০ সফর ১৪৪৬

কলেজছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ব্ল্যাকমেইল


রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২২, ০৮:৪৯ এএম
কলেজছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ব্ল্যাকমেইল

রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়নে এক কলেজছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে মামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের সহায়তায় রাঙ্গামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেন।

ট্রাইব্যুনালের বিচারিক এ ই এম ইসমাইল হোসেন অভিযোগ আমলে নিয়ে বিলাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এজাহার গ্রহণ ও মামলার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

আসামিরা হলেন অঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা ওরফে এজেন্ট (৩০), রুজন দাশ (২৪), সুমন্ত চাকমা (২৫), স্নেহাশীষ বড়ুয়া  (২৪) ও সুজন দাশ (২৮)। আসামিরা সবাই উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ফারুয়া বাজারের বাসিন্দা।

আদালত সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ব্ল্যাকমেইল ও হত্যার হুমকির পাওয়ায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে যান। পরে লিগ্যাল এইডের সহায়তায় আদালতে মামলা করেছেন।

মামলার নথি পর্যালোচনা করে জানা গিয়েছে, ১৩ এপ্রিল রাত ৯টায় ওই কলেজছাত্রী স্থানীয় এক বন্ধুর বাসায় বিজুর (বৈশাখি উৎসব) দাওয়াত খেয়ে নিজের বাসার বাইরে বের হলে অভিযুক্ত ৫ আসামি ভয়ভীতি দেখিয়ে এগুজ্যাছড়ি ফরেস্ট অফিসের কালভার্ট ব্রিজের নিচে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন।

কৌতূহল বশত কলেজছাত্রীর বন্ধু তাদের অনুসরণ করে ঘটনাস্থলের দিকে আসেন। পরে কলেজছাত্রী চিৎকার করলে তার বন্ধু এগিয়ে আসেন এবং আসামিদের কলেজছাত্রীর কোনো ক্ষতি না করার অনুরোধ করলে তারা ওই বন্ধুকেও কলেজছাত্রীর ওড়না দিয়ে বেঁধে রেখে কলেজছাত্রীকে মারধর ও পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এ সময় সুমন্ত চাকমা ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন।

পরে অঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা ও রুজন দাশ বিষয়টি কাউকে জানালে বা মামলা করলে বাদী ও তার বাবাকে হত্যা এবং ধর্ষণের ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেবে বলে হুমকি দেনে। পরে ওই কলেজছাত্রী চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে’ চিকিৎসা নেন। হাসপাতালের ছাড়পত্রেও ‘গ্যাং রেপ’-এর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘটনার পর ২৩ জুন আসামিরা আবারও ধর্ষণের হুমকি দেন। ২৮ জুন কলেজছাত্রী বিলাইছড়ি থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নিতে চায় না। পরে ১২ আগস্ট আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কলেজছাত্রী। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাঙ্গামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে হাজির করে কলেজছাত্রীর মামলার আবেদন জানায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী ও বাদীপক্ষের আইনজীবী সালিমা ওয়াহিদা বিষয়টির জানান, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রীকে ঘটনার পর থানায় মামলা না করতে চাপ প্রয়োগ এবং ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দেন আসামিরা। পরে আসামিরা কলেজছাত্রীকে ভিডিও প্রকাশ করে দেবে—এমন হুমকি দিয়ে আবারও একইভাবে বাধ্য করতে থাকেন। নিরুপায় কলেজছাত্রী আদালতে মামলা করেছেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিলে বিলাইছড়ি থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ ও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে কলেজছাত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিলাইছড়ি থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, “মামলার না নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ঘটনার অনেক পরে স্থানীয় এক হেডম্যান অভিযোগটি দিতে এসেছেন। আমি উনাকে বলেছি, ভিকটিম যেহেতু রাঙ্গামাটি শহরে থাকেন সেক্ষেত্রে আদালতে মামলা করতে পারেন কিংবা বিলাইছড়ি থানাতেও মামলা করা যাবে। তবে ভিকটিম ও তার পরিবারকে অবশ্যই আসতে হবে।”

Link copied!