নওগাঁর মান্দা উপজেলায় জনবসতি ও ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সব মহলকে নিয়ন্ত্রণ করেই গড়ে তোলা হচ্ছে একের পর এক ইটভাটা। এছাড়াও অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠছে উচ্ছেদ করা ইটভাটাও।
এদিকে, সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অধিকাংশ ইটভাটাগুলোতে অবাধে কাঠ দিয়ে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। উজার হচ্ছে ফলজ ও বনজ গাছ। পরিবেশবান্ধব বলা হলেও নিম্নমানের কয়লা পোড়ানো হচ্ছে ওইসব ভাটায়। ভাটার কালো বিষাক্ত ধোঁয়ায় আশপাশের বাড়িঘর, ফসলি জমি, ফলের গাছ, জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, “ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে রাতের বেলা আমরা ঘুমাতে পারছি না। বাচ্চারা শ্বাসকষ্টসহ নানা অসুখে পড়ছে। সেই সঙ্গে এলাকাতে গাছপালা, ফসলি জমিজমা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা জিনিসের ক্ষতি হচ্ছে। ফসলি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে-মধ্যে ইটভাটা উচ্ছেদ করলেও আবারও নতুন করে গড়ে উঠছে।”
অনুমতি ছাড়াই উচ্ছেদ করা অবৈধ ইটভাটা আবারও নতুন করে কিভাবে গড়ে উঠছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। ইটভাটা দুই একটি বন্ধে তৎপরতা দেখা গেলেও বেশিরভাগ সময় নেই প্রশাসনের নজরদারি বলে অভিযোগ করেন তারা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ইটভাটার কারণে গত ১০ বছরের বেশি সময় থেকে ওই এলাকায় কমেছে ফসলি জমি এবং ফসলের উৎপাদন। ইটভাটার ধোঁয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ধোঁয়ায় লোকজন শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। প্রভাবশালী ইটভাটার মালিকরা এসব করে গেলেও দেখার কেউ নেই।
জানা যায়, প্রতি বছর অক্টোবরে ইটভাটাগুলোর কাজ শুরু হয় এবং তা চলে মে-জুন পর্যন্ত। প্রত্যেকটি ইটভাটায় ১২-১৩ রাউন্ড ইট পোড়ানো হয়। প্রত্যেক রাউন্ডে ৩/৪ লাখ ইট পোড়ানো হয়। আর প্রত্যেক ইটভাটায় বছরে গড়ে এক কোটি ইট উৎপাদন হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি রাউন্ড ইট পোড়াতে প্রায় ৮-৯ হাজার মণ জ্বালানি কাঠ লাগে এবং সেই হিসাবে এক মৌসুমে একটি ইটভাটায় গড়ে কাঠ পোড়ে প্রায় এক লাখ মণ।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিস (ইউএনও) সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে উপজেলায় ৩৫-৩৬টি ইটভাটা চলমান রয়েছে।
মান্দা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকির মুন্সি বলেন, উপজেলায় অবৈধ ইটভাটাসহ যেসব ভাটাতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুতই উপজেলা প্রশাসন থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।