শয্যা সংকটে খোলা জায়গায় চলছে চিকিৎসা

ফরিদপুরে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। মৃত্যুও থেমে নেই। শয্যা সংকটে মেঝেতে-বারান্দা, সিঁড়ির নিচ ছাড়িয়ে এখন হাসপাতাল চত্বরের খোলা জায়গায় রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের এক ভবন থেকে অন্য ভবনে যাতায়াতের রাস্তাও দখলে নিয়েছেন রোগীরা।

এদিকে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাজেদা বেগম (৫০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এই হাসপাতালে মৃতের সংখ্যা ১৫। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ১৮৪ জন।

মাজেদা বেগম রাজবাড়ী সদর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের বাহাদুর শেখের স্ত্রী। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ডা. এনামুল হক জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ওই নারী হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল ৮টার দিকে মারা যান তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আশরাফ হোসেন বলেন, “আমি ঢাকায় থাকি। হঠাৎ করে জ্বর অনুভব করায় দুই দিন আগে বাড়িতে চলে আসি। প্রথমে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই, সেখান থেকে ফরিদপুরে পাঠিয়ে দেয়। শনিবার থেকে ভর্তি রয়েছি, বেড পাইনি। যে হারে রোগী ভর্তি হচ্ছে, তাতে মনে হয় বেড পাব না। হাসপাতালে রোগী বাড়ায় সেবা ঠিকমতো পাচ্ছি না।”

রাসেল আহমেদ নামের এক রোগী বলেন, “তিন দিন ধরে ভর্তি রয়েছি, এখনও বেড পাইনি। ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে, নেই কোনো ফ্যান, গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপর আবার মশার উপদ্রব রয়েছে। এমনিতেই গরম, তারপর মশারি টাঙালে আরও গরম লাগে।”

ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের সিঁড়ির নিচে বসে আছেন বৃদ্ধা ছাবিনা বেগম। তিনি বলেন, হাসপাতালের মেঝে, বারান্দা, সিঁড়ির নিচ কোথাও কোনো জায়গা নেই। এখন নতুন করে আসা রোগীদের হাসপাতালের বাইরে রাখা হচ্ছে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১৮৪ জন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৫৪ জন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২১১ জন।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫ জন। এর মধ্যে রাজবাড়ী জেলার পাঁচজন, ফরিদপুরের ছয়জন, মাগুরা জেলার একজন, মাদারীপুরের একজন ও গোপালগঞ্জ জেলার দুইজন। জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ১৬০ জন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬০৯ জন রোগী সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।