• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সুন্দরবনজুড়ে বনবিবির পূজা অনুষ্ঠিত


মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
সুন্দরবনজুড়ে বনবিবির পূজা অনুষ্ঠিত

বনবিবি, শাহ জঙ্গলী, গাজী, কালু, মানিক পীর, দক্ষিণ রায়—ওরা কেউ স্বর্গের দূত নন। এই মর্ত্যেরই মানুষ। তবু পূজিত হন দেব-দেবী হিসেবেই। মানুষ হয়েও বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের লোকজ বিশ্বাসে তারাই মানুষের রক্ষক, ত্রাণকর্তা।  

ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতিবছরের মতো এবারও ভারতের পঞ্জিকা অনুসারে ১ মাঘ, অর্থাৎ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সুন্দরবনের ভেতরে ঘটা করে ‘মা বনবিবি’র পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সুন্দরবনের করমজল পর্যটন স্পটের ইনচার্জ হাওলাদার আজাদ কবির জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে মোংলার পশুর নদের লাগোয়া দাকোপ উপজেলার বাণীশান্তা ইউনিয়নের সুন্দরবনঘেঁষা ঢাংমারী এলাকায় ‘বনবিবির পূজা’কে কেন্দ্র করে মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরার সুন্দরবনসংলগ্ন যেসব জায়গায় বনবিবির পূজা হয়, সেসবের একটি এই গ্রাম। সুন্দরবনে দক্ষিণ বাংলার আবহমান লোকসংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এটি।

বানিয়াশান্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুবেদ কুমার রায় জানান, এই পূজা করতে মূলত গোলপাতা ও বনের কাঠ দিয়ে ছোট আকারে বানানো হয় মণ্ডপ। মণ্ডপে বনবিবির প্রতিমার সঙ্গে থাকে বনবিবির ভাই শাহ জঙ্গুলী, গাজী, কালু, মানিক পীর, শিশু দুঃখে, ধোনাই আর মোনাই, দক্ষিণ রায় তথা বাঘসহ নানা মূর্তি। ‘বনবিবির পাঁচালি’ পাঠ, নৈবেদ্য ইত্যাদি আচারের পাশাপাশি প্রসাদ ও শিরনি বিতরণ করা হয়। শিশু দুঃখের হাতে থাকে রুমাল ও লাটিম। পূজার থানগুলো প্রচলিত পূজার থানের চেয়ে আলাদা। বনবিবির থানে প্রসাদ রাখতে ব্যবহার করা হয় সুন্দরবনের আমুরগাছের পাতা। বনবিবির উদ্দেশে শাড়ি ও অন্য পূজিতদের উদ্দেশে দেওয়া হয় লুঙ্গি।

নারীরাও বনবিবি পূজার পৌরোহিত্য করে থাকেন উল্লেখ্য করে ইউপি সদস্য পাপিয়া রানি মিস্ত্রী জানান, সুন্দরবনের ভেতরের পূজায় শিরনি রান্না হলেও তা এপারে লোকালয়ে এনে কলার পাতায় বিতরণ করা হয়। বনজীবীদের বিশ্বাস, জঙ্গল এঁটো করলে বনবিবি রুষ্ট হন। এলাকার সবাই মনস্কামনা পূর্ণ করতে মানত করেন। বনবিবির উদ্দেশে ডিম ও মুরগি মানত করা হয় বেশি। ইচ্ছা পূরণ হলে পরবর্তী বছর পূজার দিনে মানত পূরণ করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ঢাংমারী ডলফিন সংরক্ষণ দলের দলনেতা ইসরাফিল বয়াতী জানান, সুন্দরবনের জেলে, বাওয়ালি আর মৌয়ালদের কাছে বনবিবি আত্মবিশ্বাস ও সুরক্ষার দেবী, বাদাবনের রক্ষক। বহু শত বছর আগে বনবিবিকে স্মরণ করে বাঘরূপী অপশক্তি দক্ষিণ রায়ের হাত থেকে বিপদমুক্ত হয়েছিল শিশু দুঃখে। সে বিপদমুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পর গলায় কুড়াল বেঁধে ভিক্ষা করে তা দিয়ে বনবিবির পূজা প্রচলন করে। এমনিতে স্থানীয় বনজীবীরা সারা বছরই বনবিবির পূজা বা মানত করেন। তবে পয়লা মাঘে (ভারতীয় পঞ্জিকা অনুসারে) ঢাংমারীসহ পশুর নদের পশ্চিম পারে ভদ্রা নদী পর্যন্ত এলাকায় বনবিবির শতাধিক পূজা হয়।

Link copied!