ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দুই বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুই দফা সংঘর্ষে অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনসহ অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের কোপ দেওয়া হয়েছে।
আহতদের প্রাথমিকভাবে চবি মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের মধ্যে গুরুতর আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রোববার (৩১ আগস্ট) সকালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তখন গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে ককটেল বিস্ফোরণেরও খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষ চলমান রয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা জানান, সংঘর্ষ শুরুর পরও সেখানে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য উপস্থিত নেই।
ঘটনার সূত্রপাত
শনিবার (৩০ আগস্ট) দিনগত রাতে চবির ২ নম্বর গেট এলাকার একটি ভাড়া বাসার সামনে প্রথম সংঘাতের সূত্রপাত হয়। ওই বাসায় এক শিক্ষার্থী ভাড়া থাকেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসায় ফিরলে দারোয়ান গেট খুলতে অস্বীকৃতি জানান। দীর্ঘক্ষণ তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে গেট খুলে ওই ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন দারোয়ান।
এরপর ছাত্রী তার সহপাঠীদের খবর দিলে তারা সেখানে গিয়ে দারোয়ানের ওপর চড়াও হন। এ সময় দারোয়ান পালিয়ে যান। কিন্তু বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে আরও শিক্ষার্থী জড়ো হন। শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে খুঁজতে গেলে স্থানীয়রা ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ বাধে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাফিয়া খাতুন বলেন, ‘গেটে অনেকক্ষণ ধাক্কা দেওয়ার পরও খোলা হয়নি। পরে গেট খুলে আমাকে মারধর করা হয়। এরপর আমি সহপাঠীদের খবর দিলে ঘটনাটি বড় আকার নেয়।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয়রা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। হামলার সময় এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। শিক্ষার্থীদের দাবি, পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের দুটি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি ও প্রক্টরিয়াল বডির একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
রোববার সকালের ঘটনা
রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রামবাসীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ আলোচনার পর উভয়পক্ষ নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসতে রাজি না হলে প্রো-ভিসি অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন ফিরে আসার সময় পেছন দিক থেকে ইট ছুড়ে আঘাত করা হয় তাঁর মাথায়। এ সময় গ্রামবাসীর হামলায় আরও সাত শিক্ষার্থী আহত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মো. টিপু সুলতান বলেন, ‘আহতের সংখ্যা ৭০ জনের বেশি হতে পারে। শুধু চমেকে আমরা ২৪ জনকে পাঠিয়েছি, আরও অনেকে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রোববারের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে। শনিবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সংঘর্ষে অন্তত ৮০ শিক্ষার্থী আহত হন।
সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা ন্যক্কারজনক। অনেকেই আহত হয়েছেন। পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রোববারের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।’
রাবিতে ছাত্রদল-শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে রাকসু কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ে ভাঙচুর করার পর তালা লাগিয়ে দেয় শাখা ছাত্রদল। এরপর তারা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এতে ছাত্রদলের তিন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।
প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান, এদিন সকাল ৯টা থেকে কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করে ছাত্রদল। আর সকাল ১০টা থেকে মনোনয়ন পত্র বিতরণ শুরু হয়। সোয়া ১০টার দিকে ছাত্রদলের কিছু কর্মী কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বারান্দায় থাকা একটি প্লাস্টিকের চেয়ার ভেঙে ফেলে এবং একটি টেবিল উল্টে দেয়। ওই টেবিলের পাশে বসেই মনোনয়ন পত্র বিতরণ করছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এরপর ফটকে তালা মেরে দেয় তারা।

এ সময় তাঁরা ‘জিয়ার সৈনিক, এক হও লড়াই করো’, ‘প্রথমবর্ষের ভোটাধিকার, ছাত্রদলের অঙ্গিকার’, ‘আমার ভাইকে বাদ দিয়ে, রাকসুতে যাবো না’, ‘রাকসু আমার অধিকার, তুমি কে বাদ দেওয়ার’, ‘ছাত্রদলের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘প্রথম বর্ষের ভোটাধিকার, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘রাকসু ফি দিয়েছি, ভোটার হতে চেয়েছি’, ‘ডাকসু-রাকসু নির্বাচনে, প্রথমবর্ষ ভোট দিবে’, ‘প্রথম বর্ষের ভোটাধিকার, ফকির কে কেড়ে নেওয়ার’, ‘প্রথম বর্ষের ভোটাধিকার, নকিব কে কেড়ে নেওয়ার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
রাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, আমরা কোনো ভাঙচুর করিনি। টেবিলটা শুধু সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।

এ সময় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম, সহসভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ, জান্নাতুল নাঈম তুহিনা, আহসান হাবিব, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, এম তাহের রহমান, জাহিন বিশ্বাস এষাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অর্ধ-শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে রাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ. নজরুল ইসলাম বলেন, যখন রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন বর্তমানে প্রথম বর্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন না। এখন আর তাদের ভোটার করার সুযোগ নাই। তারা আগামী নির্বাচনে ভোটাধিকার পাবেন।
 
                
              
 
																 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    




























