গোপালগঞ্জ সদরের গোপীনাথপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নামেই ১০ শয্যার। এই হাসপাতালটিতে নেই একটি শয্যাও। ইনডোরে চিকিৎসা দেওয়ার মতো নেই কোনো ব্যবস্থা। ৩৯ বছর ধরে হাসপাতালটি থেকে দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র জ্বর ও সর্দির চিকিৎসা।
দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে হাসপাতালটি যেন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের মূল ভবনসহ আবাসিক ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে আছে। বছরের পর বছর জরাজীর্ণ এই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে দেওয়া হচ্ছে বহির্বিভাগের চিকিৎসা।
স্থানীয়রা বলছেন, কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকা ও রাজনৈতিক অবহেলায় বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে হাসপাতালটি। তবে জেলা সিভিল সার্জন বলছেন, মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে, নির্দেশ পেলেই সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে প্রায় সাড়ে ৫ একর জায়গার ওপর নির্মিত হয় গোপীনাথপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট পল্লী স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি। হাসপাতালটি নির্মাণ করেন তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী অহেদুজ্জামান মিয়া। তখন থেকে পার্শ্ববর্তী প্রায় ১০ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ এই হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ১৯৮৪ সালে অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে যায় ইনডোরে রোগীর সেবা প্রদান প্রক্রিয়া। এরপর থেকে অবহেলা অযত্নে পড়ে আছে হাসপাতালটি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ থেকে তিনশ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন হাসপাতালটিতে। কিন্তু ৩৯ বছর ধরে এসব রোগীরা শুধুমাত্র জ্বর ও সর্দি চিকিৎসা পাচ্ছেন হাসপাতালটি থেকে।
হাসপাতালটিতে ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের থাকার জন্য আবাসিক ভবনসহ মোট ভবন রয়েছে ৬টি। সেগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় মূল ভবনের পলেস্তারা খসে বেরিয়ে গেছে ভবনের ছাদের রড। ভবনগুলো এখন মাদকসেবিদের আড্ডাস্থল। এ ছাড়া রয়েছে পানি ও বিদ্যুতের সংকটও।
বর্তমানে হাসপাতালটিতে ১ জন চিকিৎসক, ৪ জন নার্স, ১ জন অফিস সহায়ক ও ১ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। শুধুমাত্র একবেলা বহির্বিভাগের রোগীদের সেবা দিতে আসেন ডাক্তারসহ কর্তব্যরতরা।
হাসপাতালে জ্বরের ওষুধ নিতে আসা রহমতুল্লাহ বলেন, এই হাসপাতালে আশপাশের দশটা ইউনিয়নের মানুষ এক সময় চিকিৎসা নিতে আসতো। আশির দশকে অদৃশ্য কারণে ইনডোর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ এখানে আর তেমন আসে না। তারপরও প্রতিদিন আড়াইশ থেকে তিনশ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন এখানে। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া, দ্রুত হাসপাতালটির সংস্কার করে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হোক।”
চিকিৎসা নিতে আসা রফিকুজ্জামান বলেন, “হাসপাতালের ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এখানে জ্বরের চিকিৎসা নিতে এলেও আমরা ভয়ে থাকি। এ ছাড়া দুপুরের পর কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। আমরা শুধুমাত্র জ্বর ও সর্দির ওষুধ পেয়ে থাকি।”
গোপীনাথপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট পল্লী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ বিশ্বাস বলেন, “হাসপাতালটিতে ১০টি বেড থাকার কথা। লোকবল, ডাক্তার, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি থাকার কথা, কিন্তু কিছুই নেই। শুধুমাত্র আউটডোর কার্যক্রমের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা মোট ২৫ প্রকার রোগের ওষুধ দিয়ে থাকি। কিন্তু মাঝে মাঝে শেষ হয়ে গেলে তখন সংকটে পড়তে হয়।”
গোপালগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, “দুই বছর আগে প্রথম আমি হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। পরিদর্শন শেষে হাসপাতালটির বেহাল অবস্থা দেখে তখন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে আলাদা শেড বানিয়ে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিলো। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাঠিয়েছি। সেখান থেকে নির্দেশ পেলেই হাসপাতালটির নতুন করে কার্যক্রম শুরু করবো।”
                
              
																                  
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    






































