ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পৌর মুক্ত মঞ্চে টানা চার দশক ধরে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হেলাল মিয়া ও তার পরিবার। কিন্তু গত পাঁচ দিন ধরে অজ্ঞাত একদল যুবকের বাধার মুখে বন্ধ হয়ে গেছে তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে আটকে গেছে নয়জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সদস্য নিয়ে গঠিত এই পরিবারের একমাত্র আয়ের পথ।
সদর উপজেলার রাজঘর গ্রামের বাসিন্দা হেলাল মিয়া জানান, গত ২৬ নভেম্বর প্রতিদিনের মতো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গান করছিলেন তিনি। এ সময় কয়েকজন যুবক এসে গান বন্ধের নির্দেশ দেন। তারা হেলাল মিয়াকে জানান, “অনেক গান হয়েছে, এখন থেকে এখানে আর গাইতে দেওয়া হবে না।” এমনকি ভবিষ্যতে যে-ই ক্ষমতায় আসুক, তবুও এই স্থানে গান গাওয়া যাবে না বলেও সতর্ক করে।
হেলাল মিয়া বলেন, ওই যুবকেরা বাউল শিল্পী আবুল সরকারের নাম উল্লেখ করে তাকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামার পরামর্শও দেন। তবে ওই ব্যক্তিরা কারা, তা তিনি শনাক্ত করতে পারেননি। হুমকির পর থেকে তিনি পরিবার নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন এবং মঞ্চে আর যাননি।
৪০ বছর ধরে গান-গাইয়ে জীবিকা
৬৫ বছর বয়সী হেলাল মিয়া জানান, শৈশবেই ভাটপাড়ার শিল্পী শাহনূর শাহের কাছে সংগীত শিখেছিলেন তিনি। দশ-বারো বছর বয়স থেকেই গান করে বেড়াতেন। পরে সংসার চালাতে সন্তানদেরও গানের তালিম দেন। বর্তমানে তার পরিবারে ১৩ জন সদস্য, এর মধ্যে নয়জনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। “গান ছাড়া অন্য কোনো আয় নেই। হাত পাততে হয় না—যা পাই গান গেয়ে, তাই দিয়ে চলে সংসার,” বলেন তিনি।
তার গান দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিচিতি পেয়েছে। জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তেও সংগীত পরিবেশন করেছিলেন তিনি। এমনকি ভারতীয় দূতাবাসের এক অনুষ্ঠানে গজল গেয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
সাবেক মেয়রের আশ্বাস
হেলাল মিয়া জানান, ঘটনাটি তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা হাফিজুর রহমান মোল্লা কচিকে জানিয়েছেন। কচি মোল্লা তাকে পূর্বের জায়গায় ফিরে গিয়ে গান-বাজনা শুরু করার পরামর্শ দেন এবং বাধার মুখে পড়লে জানাতে বলেন।
কচি মোল্লা বলেন, “আমি মেয়র থাকাকালে তাকে মুক্ত মঞ্চের একটি স্থানে বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। বহু জায়গায় আমি তাকে অনুষ্ঠানেও পাঠিয়েছি। তিনি সফলভাবে সংগীত পরিবেশন করেছেন। বিষয়টি আলেম সমাজকেও জানিয়েছি, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।”
প্রশাসনের পদক্ষেপ
এদিকে নবাগত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, “ঘটনাটি জানার পর আমি খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় ইতিবাচক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”






































