ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের সম্মুখ বৈলর নামাপাড়ায় পাঁচ মাসের একটি গর্ভবতী গাভীর জিহ্বা কেটে বালতিতে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। এর পর থেকেই গাভীটির দুচোখ দিয়ে অবিরাম জল পড়ছে, মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে লালা, আর তাতে ভিজে যাচ্ছে গলায় বাঁধা দড়ি। প্রাণীর প্রতি এমন অমানবিক নিষ্ঠুরতায় পুরো গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে ক্ষোভের ঝড়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, গাভীর চিকিৎসা এবং তার পেটে থাকা বাছুরের জীবন রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
খামার মালিক হরমুজ আলী জানান, ‘মঙ্গলবার রাতে আমার মেয়ে এসে বলে, বালতির মধ্যে একটি জিহ্বা পাওয়া গেছে। পরে গোয়ালঘরে গিয়ে দেখি, গরুর মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। জানামতে আমার কোনো শত্রু নেই। গরু তো কোনো অপরাধ করেনি। আল্লাহ যেন এই নিষ্ঠুরতার বিচার করেন। পেটের বাছুরের কথা চিন্তা করে পশু চিকিৎসকের সহযোগিতায় গাভীটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’
স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, আক্রান্ত গরুটি প্রায় পাঁচ মাসের গর্ভবতী। ঘটনার পর থেকে গাভীটি তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছে। স্থানীয় ষাটোর্ধ বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার জীবনে এমন ঘটনা কখনো দেখিনি। একটি বোবা প্রাণীর ওপর এমন অত্যাচার ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট কাজ। এটি শুধু পশুর প্রতি নির্যাতন নয়, মানবতার ওপরও এক চরম আঘাত।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘটনার ছয় দিন পর গাভীটি মারাত্মকভাবে শুকিয়ে গেছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে, মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে। মুখের লালায় গলায় থাকা দড়িটাও ভিজে গেছে। এখনো শুকনো খাবার খেতে পারছে না, কেবল তরল খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। গরুটিকে এক নজর দেখার জন্য আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ ছুটে আসছে; সবাই এই ঘৃণ্য ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছে ও বিচারের দাবি করছে।
খামার মালিক জানান, গরুর চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এখনো কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তবে থানা থেকে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। গাভীটির জিহ্বা প্রায় অর্ধেক কাটা হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছি এবং গর্ভের বাছুরের জীবন রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’