নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে সিনহা গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছে। এ সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বিক্ষোভে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় সজীব নামে এক পুলিশ সদস্যকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পাঠানো হয়েছে।
এ সময় শ্রমিকদের ছোড়া ইটের আঘাতে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ৫ পুলিশ সদস্য ও প্রায় ৫০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৩০ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও ৬০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) কাঁচপুর এলাকায় বিকেল থেকে চলা অবরোধ সরাতে গেলে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলে এ ঘটনা।
শ্রমিকরা জানায়, দীর্ঘ সময় ধরে তাদের বেতন বকেয়া আটকে রয়েছে। আজ বুধবার তিন মাসের বেতন দেয়ার কথা ছিল। সকাল থেকে তারা বকেয়া বেতনের জন্য অপেক্ষা করছিল। বিকেল পর্যন্ত মালিকপক্ষের কোনো সাড়া না পেয়ে শ্রমিকরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে।
এদিকে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এ ছাড়া এ অবরোধের কারণে ঢাকামুখী যান চলাচল বন্ধ হয়ে সড়কের উভয়পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে অবরোধে অংশ নেয়া শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে সোনারগাঁও থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশের সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে পুলিশ। অবরোধ তুলে নিতে বারবার শ্রমিকদের অনুরোধ করেও ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ।
সিনহা ওপেক্স গার্মেন্টের সুইং সেকশনের শ্রমিক মিজানুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বেতন বকেয়া রয়েছে। ফলে আমরা বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এখন আর দোকান বাকি ও বাসা ভাড়া বকেয়া রাখছে না মালিকরা। নিরুপায় হয়ে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে।
সিনহা ওপেক্স গার্মেন্টের শ্রমিক রায়হান, নোমান, আছিয়া বেগম ও শাহিন জানান, লকডাউন থেকেই তাদের বেতন বকেয়া রয়েছে। আজ তিন মাসের বকেয়া বেতন দেয়ার কথা বলেছিলেন মালিকপক্ষ। হঠাৎ আগামী মাসে বেতন দেয়া হবে বলে একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়। তারপরও আমরা বেতনের জন্য মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মালিকপক্ষের লোকজন আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। বাধ্য হয়ে আজ বিকেলে সড়ক অবরোধ করতে হয়েছে।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, শ্রমিক নেতারা শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে তাদের দিয়ে সড়ক অবরোধ করিয়েছে। এসময় আমিসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছি। কয়েকজন শ্রমিকও আহত হয়েছে। আমরা বলেছি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে একটা সমঝোতার চেষ্টা করছি কিন্তু শ্রমিকরা আমাদের কথা না মেনে অবরোধ করে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং ও আমাদের উপর হামলা করে। পরে তাদেরকে সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়তে হয়েছে।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, শ্রমিকদের অবরোধের কারণে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়ার পর পরিস্থিতি এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।