খুলনার রূপসায় মন্দির, দোকান ও বাড়িঘর ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (৭ আগস্ট) ঘটনার দিন রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।
ওই দিন বিকেলে হামলার ঘটনাটি ঘটে। রাতেই রূপসা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শক্তিপদ বসু বাদী হয়ে মামলা করেন।
পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাহবুব হাসান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, হামলার ঘটনায় করা মামলা হয়েছে। ওই মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন রূপসার ঘাটভোগ ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও সম্রাট মোল্লা, শিয়ালী গ্রামের মঞ্জুরুল আলম, বামনডাঙ্গা গ্রামের শরিফুল ইসলাম শেখ, রানা শেখ, মোমিনুল ইসলাম, মোল্লাহাট উপজেলার বুড়িগাংনী গ্রামের আকরাম ফকির, সোহেল শেখ, শামীম শেখ ও জামিল বিশ্বাস।
বাদী শক্তিপদ বসু বলেন, মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা পাঁচটি মন্দির, সমাধি মন্দির ও সেখানকার মূর্তি ভাঙচুর করেছে। ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে তিনটি বাড়িতে।
শনিবার (৭ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৬টার দিকে শতাধিক দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উপজেলার শিয়ালী গ্রামে চারটি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছে।
এ সময় চারটি মন্দির, ছয়টি দোকান ও একটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গ্রামবাসী ও পূজা পরিষদের নেতারা জানান, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে পূর্বপাড়া মন্দির থেকে কয়েকজন নারীভক্ত কীর্তন করতে করতে শিয়ালী মহাশ্মশানের দিকে যাচ্ছিলেন। পথের মাঝে একটি মসজিদ ছিল। মসজিদের ইমাম নারীদের কীর্তন করতে নিষেধ করেন। তখন কিছুটা তর্কাতর্কি হয়। বিষয়টি নিয়ে শনিবার থানায় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
এরপর শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শতাধিক যুবক রামদা, চাপাতি, কুড়াল নিয়ে শিয়ালী গ্রামে হামলা চালায়। এ সময় তারা গণেশ মল্লিকের ওষুধের দোকান, শ্রীবাস মল্লিকের মুদিদোকান, সৌরভ মল্লিকের চা ও মুদিদোকান, অনির্বাণ হীরার চায়ের দোকান ও তার বাবা মজুমদারের দোকান ভাঙচুর করে। শিবপদ ধরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়। তার বাড়ির গোবিন্দমন্দির, শিয়ালী পূর্বপাড়া হরিমন্দির, শিয়ালী পূর্বপাড়া দুর্গামন্দির, শিয়ালী মহাশ্মশান মন্দিরের বেশির ভাগ প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কয়েকজন বাধা দিতে গেলে তাদের পিটিয়ে আহত করা হয়।
ঘাটভোগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাধন অধিকারী জানান, এভাবে মন্দির ও বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা এর আগে কখনো হয়নি। পাশের চাঁদপুর গ্রামের যুবকরা এই ভাঙচুরে অংশ নেয়। পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সার্কেল এসপি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবাই ঘটনাস্থলে এসেছেন।
খুলনার পুলিশ সুপার (এসপি) মাহবুব হাসান জানান, ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে এবং সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।