• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

পাবনায় নাপা ট্যাবলেটের সংকট, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১, ০৫:২৪ পিএম
পাবনায় নাপা ট্যাবলেটের সংকট, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট

করোনা মহামারিকে সামনে নিয়ে পাবনায় অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজার থেকে প্যারাসিটামল শ্রেণির ট্যাবলেট ‘নাপা’ উধাও হয়ে গেছে। এই শ্রেণির অন্য কোম্পানিগুলোর ওষুধ পাওয়া গেলেও নাপা পাওয়া যাচ্ছে না। 

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের উৎপাদন করা নাপা, নাপা এক্সটা, নাপা এক্সটেন্ড ও নাপা সিরাপ সরবরাহ কম দেওয়ায় বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে এমন দাবি ওষুধ ব্যবসায়ীসহ সংগঠনের নেতাদের। অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অতি মুনাফা লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার থেকে ট্যাবলেট ও সিরাপ তুলে নিয়ে কালোবাজারি করার কারণে এমনটি হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈশ্বয়িক করোনা মহামারিতে এ অঞ্চলে মৌসুমি জ্বর, সর্দি ও কাশি করোনা উপসর্গ হিসেবে ধরে নেওয়ায় নানা শ্রেণির মানুষের মধ্যে একধরনের ভয়ভীতি কাজ করছে। পাবনা জেলার শহর, হাটবাজার বা গ্রামাঞ্চলে মৌসুমি এই জ্বর, সর্দি ও কাশির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে মারাত্বক হারে। সাধারণ মানুষের নিজস্ব ধারণা মতেই তারা জ্বর, সর্দি ও কাশির জন্য বিশেষ করে নাপা, নাপা এক্সটেন্ড, নাপা এক্সটা ও নাপা সিরাপ সাধারণত সেবন করে থাকেন। প্রতিটি ওষুধের দোকানেই এই শ্রেণির ওষুধগুলোর ব্যাপক চাহিদা থাকায় অধিকাংশ স্থানেই মিলছে না। তবে দুই মাস ধরে নাপা ট্যাবলেট বাজার থেকে উধাও হলেও অন্যান্য ওষুধ কিছুটা পাওয়া গেলেও ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা টাকা। 
 
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পাবনা ডিপো ইনচার্জ হারুন উর রশিদ বলেন, গতানুগতিক টার্গেটের চেয়ে বেশি ওষুধ বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে কিছু ওষুধ মানুষ অতিরিক্ত ক্রয় করায় অসাধু ব্যবসায়ীরা এটাকে সিন্ডিকেটে পরিণত করে সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকায় বিক্রি করছেন এমন অভিযোগ রয়েছে। 

হারুন উর রশিদ বলেন, গত জুলাই মাসে এই ডিপো থেকে নাপা ট্যাবলেট টার্গেট ছিল আট হাজার বক্স। সেখানে বিক্রি হয়েছে সাড়ে আট হাজার বক্স। নাপা এক্সটেন্ড ট্যাবলেট টার্গেট ছিল ৫ হাজার ২০০ বক্স। বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৪৫০ বক্স। নাপা এক্সটা টার্গেট  ১৩  হাজার বক্স থাকলেও বিক্রি হয়েছে ২২ হাজার বক্স। নাপা সিরাপ ১ লাখ ৩২ হাজার পিস টার্গেট থাকলেও বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার পিস।

তিনি আরও বলেন, চলতি আগস্ট মাসে গত ৩ দিনে ৭০ হাজার পিস নাপা সিরাপ বিক্রি হয়েছে। 
 
বুধবার পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের মেডিসিন কর্নার, ওষুধ বিতান, ঔষধ বিপণন, সিটি মেডিকেল, ড্রাগস সেন্টার, ড্রাগ অ্যান্ড সার্জিকেল সেন্টার, মোহাম্মদীয়া মেডিকেল হলসহ বড় বড় ওষুধের দোকানগুলো ঘুরে নাপা ট্যাবলেট পাওয়া যায়নি। 

ওষুধ বিতানের রতন, ওষুধ ব্যবসায়ী রকি, রনি, আরিফুর রহমান, হাফিজুর রহমানসহ কমপক্ষে ২০ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, কমপক্ষে দুই মাস ধরে ক্রেতাদের নাপা গ্রুপের ওষুধ ঠিকঠাক দিতে পারছি না। কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে অর্ডার দিলেও তারা চাহিদানুযায়ী ওষুধ দিচ্ছেন না।

কেন সংকট সৃষ্টি হয়েছে এমন প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা বলেন, সাধারণ মানুষই এখন বড় ডাক্তার হয়ে গেছে। জ্বর, সর্দি ও কাশি হলেই এক পাতার পরিবর্তে কেউ বক্স ধরে কেউ বা পাতা পাতা ওষুধ কেনার কারণে বাজারেও কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। 

ওষুধ বিক্রেতারা জানান, ক্রেতারা ওষুধের নাম মুখস্ত করে আসে। প্যারাসিটামল গ্রুপের নাপা ছাড়াও এইস প্লাস, ফাস্ট, টার্মেন, রেনোভাসহ বিভিন্ন কোম্পানি ওষুধ বাজারে ছেড়েছে। তারপরও নাপা প্রতি মানুষের অন্ধ বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। প্যারাসিটামল গ্রুপের অনেক ওষুধ থাকলেও সেগুলো বিক্রি করতে পারছি না।

বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি পাবনা জেলা শাখার সভাপতি এফ এম হুমায়ুন কবির খোকন বলেন, বাজারে নাপার সংকটের মূল কারণ কোম্পানিগুলো চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। মোট চাহিদার ৫০ শতাংশও দিতে পারছে না। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সমিতির পক্ষ থেকে নাপা গ্রুপের অন্য ওষুধ বেশি বেশি রেখে সাধারণ মানুষকে কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। 

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পাবনাস্থ মেডিকেল প্রমোশন অফিসার জয়নাল আবেদীন জানান, কোম্পানিতে উৎপাদনে কোন কমতি নেই। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কতিপয় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। ফলে নাপা ও সহযোগী ওষুধগুলোর সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা নাপাসহ বেশ কিছু ওষুধ আটকে রেখে বেশি দামে অন্যত্র কালোবাজারী করার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে তিনিও খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছেন। 

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. কেএম আবু জাফর বলেন, গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে একটি প্রথা চালু রয়েছে জ্বর হলেই নাপা খেতে হয়। আসলেই এমন ধারণা ভুল। নাপা ছাড়াও অনেক ওষুধ রয়েছে যেগুলো নাপার চেয়ে মানুষের শরীরে ভালো কাজ করে।

নাপার বিকল্প অন্যান্য ওষুধ খাওয়ার প্রতি তিনি আহবান জানান।

আর পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলছেন, নাপা খেলেই জ্বর যায় এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে রয়েছে সাধারণ মানুষ। বাজারে ভালো ভালো কোম্পানির তৈরি বিভিন্ন নামের প্যারাসিটামল ওষুধ আছে, সে সম্পর্কে তাদের ধারণা কম। জ্বর হলে চিকিৎসকরা প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে তার মানে শুধু নাপা খেতে হবে, তা নয়, ভালো মানের অন্য কোম্পানির প্যারাসিটামল খেলেই হবে। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।

Link copied!