সিলেট বিভাগ সৌন্দর্যের প্রাচুর্যে ভরা। সবখানে ছড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন সব পর্যটনকেন্দ্র। সবুজে মোড়া পাহাড়ের কোলঘেঁষা পাথুরে নদী, ঝর্ণা, বন, চা-বাগান, নীল জলরাশির হাওরসহ নানান সৌন্দর্যের আঁধার। কী নেই এখানে! সিলেটের এমন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশের পর্যটক আর ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ভিড় জমান। সিলেটের অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম নয়নাভিরাম ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদের উৎসমুখে এর অবস্থান।
সিলেটের সীমান্তবর্তী একটি নদের নাম ধলাই। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে এসেছে এটি। ধলাই নদের উৎসমুখে পাঁচ একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সাদা সাদা পাথর। ওপারে উঁচু পাহাড়ে ঘেরা সবুজের মায়াজাল।
সেখান থেকে নেমে আসা ঝর্ণার অশান্ত শীতল পানির অস্থির বেগে বয়ে চলা সব পর্যটকদের টানে। স্বচ্ছ নীল জল, সাদা পাথর আর পাহাড়ের সবুজ মিলেমিশে যেন একাকার। ধলাইয়ের বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরের বিছানা শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে হাজার গুণ।
কোন সময় যাবেন
ভোলাগঞ্জ যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে বর্ষাকাল ও তার পরবর্তী সময়। অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই সময় ভোলাগঞ্জ যাওয়া পর্যটকদের জন্য সব থেকে উপভোগ্য সময়। অন্য সময় গেলে সেখানে পাহাড় দেখতে পেলেও নদীতে বা ছড়ায় পানির পরিমাণ কম থাকে। আর শীতকালে সাদা পাথরের এলাকায় পানি থাকে না। কাজেই সে সময় পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে হয়।
যেভাবে যাবেন
ভোলাগঞ্জ যাওয়ার আগে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে সিলেট শহরে। রাজধানী ঢাকা থেকে আপনি সড়ক, রেল ও আকাশপথে যেতে পারেন সিলেট শহরে। হানিফ, শ্যামলী, গ্রিনলাইন গাড়িগুলো সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে যায় সিলেটের পথে। ভাড়া ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে খুব সহজেই চলে যেতে পারেন সিলেটে। তা ছাড়া আকাশপথে মাত্র ৪৫ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারেন সিলেট নগরীতে। সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা।
সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলে সিলেট কোম্পানীগঞ্জ রুটে। ১২০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় কোম্পানীগঞ্জের টুকের বাজারে নামাবে। টুকের বাজার থেকেই ট্রলারে চলে যেতে পারেন সাদা পাথর। কোম্পানীগঞ্জ পৌঁছে টুকের বাজার ঘাট থকে ট্রলারে সাদা পাথর পৌঁছাতে ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে যাওয়া-আসার নৌকা ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০ টাকা। মনে রাখবেন এখানে নৌকা রিজার্ভ করে নেবেন নইলে ভুগতে হবে। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ সরাসরিও চলে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দশমাইল নামক স্থান থেকে নৌকা নিলে ৫০০-৬০০ টাকা ভাড়া পড়বে। মনে রাখবেন এ ক্ষেত্রে আপনাকে অটোরিকশায় বেশি টাকা গুনতে হবে।
কোথায় খাবেন
ভোলাগঞ্জ বাজারে তেমন কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। তবে ভাত, মাছ, মাংস ইত্যাদি দেশি খাবার পাওয়া যায়। ভোলাগঞ্জ যাওয়ার আগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ভালো মানের কিছু রেস্টুরেন্ট পাবেন। যদি আরও ভালো কিছু খেতে চান তাহলে সিলেট শহরে এসে খেতে হবে।
সিলেটে জিন্দবাজারে বেশকিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট আছে। যেমন, পাঁচ ভাই, পানশি, পালকি। এদের মধ্যে পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টের খাবার বেশ ভালো এবং দামও তুলনামূলক কম। হরেক রকম ভর্তা, মাংস, খিচুড়ি পাবেন এখানে। আবার মাছ-মাংস নিলে ভাত ও ডাল পাবেন বিনা মূল্য।
কোথায় থাকবেন
ভোলাগঞ্জে থাকার তেমন কোনো জায়গা নেই। তাছাড়া এখানে থাকার প্রয়োজনও পড়ে না। সাদা পাথর দেখেই ফিরে আসতে পারবেন সিলেট শহরে। এখানে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকায় ভালো মানের হোটেল পেয়ে যাবেন। তবে হোটেল নিলে অবশ্যই অম্বরখানা এলাকায় নেবেন। কেননা এখান থেকে খুব সহজে যেকোন জায়গায় যেতে পারবেন।