• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল মেসির আর্জেন্টিনা!


পার্থ প্রতীম রায়
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২২, ০৯:৪৬ পিএম
বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল মেসির আর্জেন্টিনা!

বিশ্বকাপ ফুটবল আসলেই দুইভাগে হলুদ ও আকাশী-নীল, দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশি সমর্থকরা। ২০১১ সালে আর্জেন্টিনা দলের বাংলাদেশ সফরের পর থেকেই দেশে আলবিসেলেস্তাদের পক্ষে জন সমর্থন বেড়েছে বহুগুণে। ফুটবল মাঠে প্রভাব বিস্তার করা আলবিসেলেস্তারা খেলেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। অবশ্য সেটা ফুটবল মাঠে নয়, ক্রিকেটের ২২ গজে। তিনবার টাইগারদের মুখোমুখি হয়ে প্রত্যেকবারই হারের তিক্ত স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল ল্যাতিন দেশটিকে।

ডিয়েগো ম্যারাডোনা-লিওনেল মেসিদের জন্য বিখ্যাত আর্জেন্টিনায় ক্রিকেটের শুরুটা সাম্প্রতিক সময়ে নয়। ইতিহাসের সৌজন্যে একটু পিছনে ফিরলে দেখা যাবে ১৮৬৮ সালে প্রথম প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেট খেলেছিল দেশটি। প্রতিপক্ষ ছিল প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ও তাদের প্রতিবেশি উরুগুয়ে।

সময়ের ব্যবধানে দুই দলের কোনোটিই হয়ে উঠতে পারেনি ক্রিকেটের পরাশক্তি। সময়ের স্রোতে ক্রিকেট মাঠে পিছনের দিকে হেটেছে দেশ দুইটি। পিছনের দিকে হাঁটলেও ৭০-র দশকে ক্রিকেটে আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয় আর্জেন্টিনার। ১৯৭৪ সালে ইন্টারন্যাশন্যাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সদস্যপদ লাভ করে। সদস্য পদ পাওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করেছিল। একবিংশ শতাব্দীতে বন্ধ করে দিয়েছিল ক্রিকেটের মূল স্রোতে স্থায়ীভাবে খুটি স্থাপনের চেষ্টা।

আইসিসির সদস্যপদ থাকলেও টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে আর্জেন্টিনা। এমনকি দেশটির পুরুষ ক্রিকেটে নেই কোনো পেশাদার দল। পেশাদার না হলেও ক্রিকেটপ্রেমী কয়েকজনের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে একটি দল। মূলত ওই দলের উপর ভিত্তি করে নানা সময়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ম্যাচ খেলে আর্জেন্টিনা ক্রিকেট দল।

পেশাদার না হলেও নানা ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়ে এখনও টিকে আছে দলটি। প্রতিনিধিত্ব করে আর্জেন্টিনা আকাশী-নীল ওই পতাকাকে। এমনকি এক সময় আইসিসির নানা টুর্নামেন্ট টিকেও ছিল দলটি। এমনকি আইসিসির দ্বিতীয় সারির টুর্নামেন্ট আইসিসি ট্রফিতে ছিল দেশটির সক্রিয় অংশগ্রহণ। এই টুর্নামেন্টেই তিনবার বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা।

প্রথমবার ১৯৮৬ সালের ২৫ জুন হেয়ারফোর্ডে আইসিসি ট্রফিতে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনা। ওইবার বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম দেখায় আগে ব্যাট করতে নেমে আর্জেন্টিনা থেমেছিল ১২২ রানে।

ওপেনার রকিবুল হাসানের অপরাজিত ৪৭ রানে ভর করে প্রথমবারের দেখায় ম্যাচ ৭ উইকেটে জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে ১৯৯৪ ও ১৯৯৭ সালে আরও দুইবার প্রতিপক্ষ হিসেবে ল্যাতিন আমেরিকার দেশটিকে পেয়েছিল বাংলাদেশ।

১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়েছিল টাইগাররা। ওই ম্যাচে বার্নান্দো ইরিগুয়েনের ৩০ রানে ভর করে ১৩৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশের হয়ে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন এনামুল হক মনি ও নাঈমুর রহমান দূর্জয়। এছাড়াও মোহাম্মদ রফিকের শিকার ছিল এক উইকেট।

জবাবে দূর্জয়ের ৩৭ বলে ৫৩ রানে করে ২৪ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এর আগে ১৯৯৪ সালে নাইরোবির সিম্বা ইউনিয়ন গ্রাউন্ডে আরও একবার আলবিসেলেস্তাদের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ।

সেবার বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাট হাতে জয়ের নায়ক ছিলেন আতাহার আলী খান। এহাড়াও বল হাতে গোলাম নওশের প্রিন্স ও এনামুল হক মনি নিয়েছিলেন তিনটি করে উইকেট। বিসিবির বর্তমান প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুও খেলেছিলেন ওই ম্যাচ। বল হাতে দুই উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।

আইসিসি ট্রফিতে নিয়মিত থাকা আর্জেন্টিনা ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে ক্রিকেট মানচিত্র থেকে। ২০০৭ সালে সর্বশেষ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলছিল দেশটি। মাঝে হারিয়ে গিয়েছিল দেশটির ক্রিকেট বোর্ডও। আশার কথা গত কয়েক বছরে পুর্নগঠিত হয়েছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। ক্রিকেট মানচিত্রে আস্তে আস্তে ফিরে আসার চেষ্টায় আছে মেসিদের দেশ। পুরুষ ক্রিকেটে এখনও পেশাদার দল গঠন করতে না পারলেও নারী ক্রিকেটে ইতিমধ্যেই হয়েছে তাদের পেশাদার দল। হয়তো সময় গেলে হয়তো গড়ে উঠবে ছেলেদের দলও। এগিয়ে যাবে আর্জেন্টিনার ক্রিকেট।

Link copied!