• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
অভিজিৎ রায়...

অক্ষর লেখার স্বাধীনতাকে কিনেছে জীবনের মূল্যে


দীপেন ভট্টাচার্য
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২, ০৩:০৩ পিএম
অক্ষর লেখার স্বাধীনতাকে কিনেছে জীবনের মূল্যে

২০২০তে লিখেছিলাম, “২৬শে ফেব্রুয়ারিতে আশা করি ঢাকার বইমেলা অভিজিৎ রায় ও তার অন্যান্য নিহত সহপথিক লেখকদের জন্য এক মিনিট সময় ব্যয় করবে। এ দেশে যেমন ছিল অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ, ফয়সাল আরেফিন দীপন, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল, জুলহাস মান্নান, ভারতে তেমনই ছিল কালবুর্গী, পানসারে, ধাবলকর, গৌরী লঙ্কেশ। এরা সবাই তাদের অক্ষর লেখার স্বাধীনতাকে কিনেছে জীবনের মূল্যে। ৩৮ বছর বয়সের লোরকাকে ফ্যাসিস্টরা গুলি করে মেরে ফেলেছিল। একজন কবিকে চরমপন্থীরা এমনই ভয় করত। তাদের পাল্টা একটি কবিতা লেখার মুরোদ ছিল না। কিন্তু এরা সবাই এখন অতীত। প্রশ্ন হল বর্তমানের লেখক বর্তমানের পাঠক তাদের ভবিষ্যতকে কী দিয়ে গড়বে? তাদের কি নতুন একটি কবিতা লেখার, নতুন একটি কবিতা পড়ার শক্তি থাকবে? নাকি তারা ইতিহাসের গড্ডালিকায় ইতিহাস হয়ে রইবে?”
লোরকার কথা লিখেছিলাম। তাঁর নামের সঙ্গে আর একটি নামের উচ্চারণের দরকার ছিল।

মেহেরুন্নেসার বয়স হয়েছিল ঊনত্রিশ। ১৯৭১-এর ২৩শে মার্চ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তখনকার প্রথিতযশা কবিদের সাথে পড়লেন তাঁর কবিতা ‘জনতা জেগেছে’ 
‘বেয়নটের আর বুলেটের ঝড় ঠেলে
চির বিদায়ের পতাকা দেব, সপ্ত আকাশ মেলে।’
এর চারদিন পরে মীরপুরে তাঁর বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনির অবাঙালি দোসরদের হাতে নিহত হলেন মেহেরুন্নেসা, তাঁর দুই ভাই, তাঁদের মা। মেহেরুন্নসা ও তাঁর ভাইদের ছিন্ন মাথা গড়াল মাটিতে। ১৯৪৭-এর দেশভাগের পরে পশ্চিম বঙ্গ থেকে মেহেরুন্নেসার পরিবার পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন, সেই পাকিস্তানে তাঁদের নতুন জীবনের স্বপ্ন সার্থক হয়নি। পঞ্চাশ বছর পরে বাংলার মানুষ মেহেরুন্নেসাকে বিস্মৃত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এখন অনেকেই ধর্মীয় অনুভূতির সামান্য বিচলনে অস্থির হয়ে যায়, তাঁরা ভুলে গেছে ১৯৭১ সনে ধর্মকে বাঁচানোর নামে হত্যা করা হয়েছিল বাংলার সুযোগ্য সন্তানদের, ছাদের ফ্যানের সাথে কবি মেহেরুন্নেসার ছিন্ন মস্তক চুল দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এমনই ছিল তাদের রোষ!

সেই রোষের শিকারই হয়েছিলেন অভিজিৎ রায়। কারণ ৭১ থেকে আমরা শিখিনি। ১৯৪৭ সনে যে নীতিগত আদর্শে পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল, বহু রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের উদয়ন সেই আদর্শকে পরিত্যাগ করতে পারেনি। মেহেরুন্নেসার মস্তক যারা ছিন্ন করেছিল তাদের মতাদর্শীরা এখনও বাংলার মাঠে বিচরণ করে।

Link copied!