• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

সবকিছু ছাপিয়ে রেহানা মরিয়ম নূরে পরিণত হয়েছেন বাঁধন


সৌরদীপ দাশগুপ্ত
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২১, ১২:২৭ এএম
সবকিছু ছাপিয়ে রেহানা মরিয়ম নূরে পরিণত হয়েছেন বাঁধন

হয়তো সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার কারণে, হয়তোবা কদিন আগে দীর্ঘ সময় ধরে একজনের জীবনে ঘটে যাওয়া রীতিমতো বীভৎস ঘটনা জানার কারণে আজ যখন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দেখতে গেলাম, প্রথমার্ধে ছবিটা সামলে উঠতে কিছুটা কষ্টই হয়েছে। নিজেকে কিছুটা সময় দিতে হয়েছে ধাতস্থ হতে, ছবিটা নিয়ে ভাবতে।

আমাদের যেকোনো শিল্পের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্তি মানুষের মাঝে একটা বিশেষ ধরনের আকর্ষণ তৈরি করে, দেখতে চাইবার আগ্রহের কারণ যেমন কান উৎসবে এর প্রাপ্তির সাথে সম্পর্কিত, আমার নিজের আগ্রহের কারণটিও এটাই। কেউ পুরস্কারের জন্য ছবিটার ভূয়সী প্রশংসা করছিলো, কেউবা ‘ওভাররেটেড’ বলে চালিয়ে দিচ্ছি।

অনেকটা এজন্যই এটা নিয়ে যতগুলো লেখা দেখেছি, চেষ্টা করেছি সচেতনভাবে এড়িয়ে যেতে, প্রিকনসিভড্ কোনো চিন্তা যেন মাথায় ঢুকে না যায়। দর্শক হিসেবে আমার মতো প্রায় মূর্খ একজন মানুষেরও এই ছবিটা নিয়ে কিছু লিখতে চেষ্টা করবার একটাই কারণ–ছবিটা আসলেই আমাকে নাড়া দিয়েছে।

গল্পের বিষয়ের কথা ভাবলে মনে হবে যে গল্পটা অতি সাধারণ – সমাজে যা ঘটে চলছেই। ‘সাধারণ’ বা ‘নরমাল’ বলার পিছে আমাদের সমাজের একটা ভয়াবহতাকে নরমালাইজ করে ফেলার যে প্রবণতা, তা কাজ করে। গল্পটা আমাদের রূঢ় বাস্তবতার, আমাদের সমাজের। চরিত্রগুলোও তৈরি ঠিক ওভাবেই; প্রতিটা চরিত্র একে অপরের সমান্তরালে কতগুলো ওপেন এন্ডেড গল্প তৈরি করছে, দর্শকদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে, উত্তরটা খুঁজে নেওয়ার কাজ আমাদেরই।

কখনোবা চরিত্রগুলোর চিন্তাধারার মাঝে–বিশেষ করে রেহানা চরিত্রে স্ট্রিম অফ কনশাসনেসের একটা আবছা প্রভাব আছে বলে মনে হয়, সাথে অ্যানির ক্যারেক্টারাইজেশন এবং পরবর্তীতে তার চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ করা–সব মিলিয়ে শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন। এই হাজারো প্রশ্নের সাথে ক্যামেরার অস্থিরতা এবং নীলচে কালার টোন আরেক ভিন্ন রকম আবহের তৈরি করে, দমবন্ধকরা একটা পরিবেশ তৈরি করে।

ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিকের অনুপস্থিতি (অথবা স্বাভাবিক বিষয়াদির উপস্থিতি), এবং দরজায় ক্রমাগত সেই ঠকঠক শব্দ, কিংবা কল্যাপ্সিবল গেটের বাইরে থেকে রেহানার মুখে সজোরে জল ছুড়ে মারা–অস্থিরতা ও অস্বস্তি দুটোরই জন্ম দেয়।

এই অস্থিরতা ও অস্বস্তি – অবচেতন মনের মাঝে এই অনুভূতি তৈরি করার যে শৈল্পিক একটা ব্যপার ছিল, শেষ কবে বাংলাদেশের কোনো চলচিত্রে দেখেছি তা জানি না। দর্শকদের জন্য একটা ডিসক্লেইমার দেওয়াটা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি কেননা মানসিক চাপ তৈরি হয়, এমন উপাদান বেশ সুস্পষ্ট। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে এই ছবি দেখতে যাওয়াটা ব্যক্তিগতভাবে নিরুৎসাহিত করব।

মূল কথায় আসলে এটা বলতে হবে, আজমেরি হক বাঁধন (Azmeri Haque) সবকিছু ছাপিয়ে রেহানা মরিয়ম নূরে পরিণত হয়েছেন। চরিত্রটাই যেনো বাস্তব, আমি রেহানাকে দেখেছি, বাঁধনকে নয়। প্রতিবাদ, রাগ, অপমান, অসহায়ত্ত্ব এই সবকিছুর ভাষা তার চাহনিতে স্পষ্ট! ছবির একেবারে শেষ দৃশ্যের কষ্ট এবং ইমুর অভিনয়, অথবা সেই তিন গোণা, আবারো দরজার শব্দ, চিৎকার… আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ যে ম্যাজিকাল একটা কাজ করেছেন, এটা একবার দেখে ছবিটা নিয়ে লেখার ধৃষ্টতা দেখাতেও ক’বাদ ভাবতে হলো।

গল্প সম্পর্কে কিছু না বলে লেখাটা বড্ড কঠিন, কিছু অংশ তুলে না আনলে বোঝানো যায় না যে শিল্পের শক্তি কতোদূর যেতে পারে। অসম্ভব শক্তিশালী একটা চলচিত্র হিসেবে রেহানা মরিয়ম নূর পরিচিত হয়ে থাকবে – এটুকু মনে করি।
 

Link copied!