• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

মাসুম ভাইয়ের জন্য


কাওসার চৌধুরী
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২২, ১১:২৫ এএম
মাসুম ভাইয়ের জন্য

মাসুম ভাইয়ের (অভিনেতা মাসুম আজিজ) অনেকগুলো টিভি নাটকে ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করেছি আমি। একক নাটক করেছি বেশ কটা। একটা সিরিয়াল করেছিলাম ৫০-৬০ পর্বের।

এসবের মাঝে একটি নাটকের কথা খুব মনে পড়ে। নাটকের মূল গল্পটি প্রয়াত সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের লেখা। নাট্যরূপ দিয়েছিলেন মাসুম আজিজ। আর ক্যামেরায় ছিলাম আমি। ওতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মামুন ভাই (মামুনুর রশীদ), রওশন জামিল, শান্তা ইসলামসহ আরও বেশ কজন। নাটকটির শিরোনাম ছিল ‘নিজস্ব রিপোর্ট।

শাহ আলম নামের একজন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসারযুদ্ধে পরাজিত হয়ে সেই সময়ে ফার্মগেট ওভারব্রিজের কোনায় বসে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এটা আশির দশকের মাঝামাঝি একটি সময়ের কথা। কেমন করে জানি সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের নজরে পড়ে যান তিনি (মুক্তিযোদ্ধা)। মোনাজাত উদ্দিন ওনাকে নিয়ে ‘অনুসন্ধানী রিপোর্ট’ করলেন ‘সংবাদ’ পত্রিকায়। প্রচণ্ড আলোড়ন তুলেছিল সেই রিপোর্ট। 

তাতে কাজের কাজ অবশ্য তেমন কিছুই হয়নি; মাঝখান থেকে একদিন পুলিশ এসে ধরে নিয়ে হাজতে আটকে রাখে পঙ্গু সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। মোনাজাত উদ্দিনও নাছোড়বান্দা। তিনি এসব নিয়ে সিরিয়ালি রিপোর্ট করতে থাকেন একের পর এক। সেই রিপোর্টগুলোকে ভিত্তি করে মোনাজাত উদ্দিন নিজেই লিখেছিলেন উপন্যাস (কিংবা গল্প) এই ‘নিজস্ব রিপোর্ট’ শিরোনামে।

মাসুম ভাই সেই গল্পটিতে নাট্যরূপ দেন। নাটকটি করতে গিয়ে প্রচুর কষ্ট করে শুটিং করেছিলাম। রাজধানীর পেয়ারাবাগ বস্তি, উলন, বাড্ডা, ফার্মগেটসহ নানা লোকেশনে রাত-দিন কাজ করেছি। আরও কটি একক নাটক করার পরে একদিন একটি সিরিয়াল ধরে বসলেন মাসুম ভাই। সেটাও আবার মুক্তিযুদ্ধের গল্প।

একটি মজার বিষয় আমি লক্ষ করেছি দীর্ঘদিন। কাহিনিতে মুক্তিযুদ্ধের কিছু থাকলেই আমার ডাক পড়ত—ক্যামেরার সামনে কিংবা পেছনে কাজ করার জন্য। এখন তো আর অভিনয় কিংবা ক্যামেরা-ওয়ার্ক কোনোটাই করা হয় না।

অভিনয় করতে খুব ভালোবাসতেন মাসুম ভাই। কোনো নাটকে নির্দেশনা দিলেও সেই নাটকে নিজেই আবার অভিনয় করতেন। অভিনেতা হিসেবে ওনার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার তো কোনো সুযোগই নেই। অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন একাধিকই নয়, বলা যায় বেশ কয়েকবার! সর্বশেষ রাষ্ট্রের দ্বিতীয় উচ্চ পুরস্কার ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হয়েছেন অভিনয়ে অসাধারণ অবদানের জন্য।

ওনার অসুস্থতার কথা শুনেই বুকটা ঢিপ ঢিপ করছিল। ওনার দুর্বলতার জায়গাটির কথা অনেকের মতো আমিও জানতাম। মুড়ির মতো ধূমপান করতেন মাসুম ভাই এক সময়। ‘ফুসফুস’ তাঁকে ক্ষমা করেনি! হায়...! এই ফুসফুস নিয়েই অসাধারণ গান করতেন মাসুম আজিজ। বিশেষত ভূপেন হাজারিকার গান মাসুম ভাইয়ের কণ্ঠে মানাত ভালো। শুটিংয়ের ফাঁকে ওনার গান শুনেছি অজস্র। আজও কানে বাজে মাসুম ভাইয়ের অসাধারণ কণ্ঠের গান।

মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন এই শিল্পী। কাজের ফাঁকে যুদ্ধ-দিনের গল্প করতেন মাসুম ভাই। সে অনেক গল্প, অনেক কাহিনী। ... আজ তাঁর প্রয়াণের দিনে খুব বেদনা অনুভব করছি বুকের বাম পাশে।

যেখানেই যাচ্ছেন ভালো থাকবেন মাসুম ভাই; দাপট নিয়ে থাকবেন, এই বাংলাদেশে যেমনটি ছিলেন। তবুও ভালো থাকুন। বিদায় বলব না মাসুম ভাই। কারণ ‘প্রকৃত বন্ধুর বিদায় নেই’। 

Link copied!