• ঢাকা
  • বুধবার, ২২ মে, ২০২৪, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

দূষণ রোধে জনসচেতনতা ও নগরায়ণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা দরকার


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪, ০৭:২৬ পিএম
দূষণ রোধে জনসচেতনতা ও নগরায়ণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা দরকার

প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বসবাস যান্ত্রিক এই ঢাকা শহরে। ঢাকা উত্তর সিটি মেয়রের তথ্যমতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষ ঢাকা শহরে আসছেন। বিশাল এই সংখ্যক মানুষের বসবাসের এই শহরে নির্মল বায়ুর বড়ই অভাব। যান্ত্রিক এই শহরে প্রাণ খুলে নিশ্বাস নেওয়ার মতো পরিবেশ নেই। এর বড় কারণ, শহরের দূষিত বাতাস। শুধু যে শহরে দূষিত বাতাসেই থেমে আছে পরিবেশ, তা না, সঙ্গে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণের মতো বড় বড় দূষণে জর্জরিত নগরী। ফলে এর প্রভাব পড়ছে বাসিন্দাদের ওপর। তারা আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। শহরকে পরিবেশ দূষণ থেকে উত্তরণের পথ থাকলেও, নানা উন্নয়নে সেটি মুখ থুপড়ে পড়েছে। ঢাকা শহরকে সুস্থ পরিবেশে গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। বিভিন্ন সময় শহরের দূষণ রোধে তাদের প্রতিবাদ করতেও দেখা যায়। কিন্তু সুস্থ শহর গড়ে তোলার জন্য তাদের পরিশ্রম ও সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরগুলোকে অবগত করার সুফল কতটুকু দৃশ্যমান হয়েছে, সেটাই দেখার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রায় সময়ই দেখা যায় বায়ুদূষণে বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান শীর্ষে। এ খবর স্থান পায় টিভি, অনলাইন মিডিয়ায়। কখনোবা জায়গা হয় প্রিন্ট মিডিয়ায় লিড স্টোরিতে। বায়ুদূষণ রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা রোধ করতে সক্ষম হয়নি। দুঃখজনক হলেও সত্য, বেশির ভাগ সময়ই আমরা নিজেরাই নিজের স্বার্থের জন্য বা উন্নয়নের জন্য পরিবেশের এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দূষিত করছি।

বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের বড় কারণ হলো রাজধানীর বর্জ্য। নগরীর অনেক বর্জ্য রাস্তাঘাটে যেখানে-সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে, কেউবা অনিচ্ছাকৃতভাবে বর্জ্য, প্লাস্টিক যেখানে-সেখানে ফেলে দিয়ে রাখছে। সড়কে পড়ে থাকা এসব বর্জ্য একত্রে করে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। আরেকটি দুঃখজনক বিষয় হলো, যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ঢাকাকে পরিষ্কার রাখতে নিয়োগপ্রাপ্ত; তারাও আজকাল বর্জ্য সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) ঝামেলা এড়াতে স্বল্প কষ্টে বর্জ্য সড়কে পুড়িয়ে ফেলছে। ফলে তৈরি হওয়া কালো ধোঁয়া ঢাকার পরিবেশকে আরও বিষিয়ে তুলছে, যা ঢাকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিটা আরও বৃদ্ধি করছে।

গবেষণাগুলোতে দেখা যায়, ঢাকার অন্তত ৭০টির বেশি স্থানে খোলা আকাশের নিচে বর্জ্য পোড়ানো হয়। যার ফলে ডাইঅক্সিন, ফুরান, মার্কারি, পলিক্লোরিনেটেড বাই ফিনাইলের মতো বিষাক্ত উপাদান যুক্ত হচ্ছে বাতাসে। এ ছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইডসহ অন্তত ছয়টি বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়, যার ফলে বায়ু দূষিত হচ্ছে।

সুস্থ নগরী থেকে দূরত্ব বাড়ার আরেকটি কারণ হলো- নির্বিচার গাছ কাটা। দেখা যায়, নগরীর যে জায়গাগুলোতে একসময় সবুজ প্রকৃতি উঁকি দিত নগরীর বড় বড় দালানকোটার ফাঁক দিয়ে, সেই জায়গাগুলোতে নির্বিচার গাছ কেটে গড়ে তোলা হচ্ছে শিল্পায়ন। সবুজ প্রকৃতি জায়গাগুলোতে শিল্পায়ন গড়ে ওঠার কারণে গাছ ‘উধাও’ হচ্ছে।

আমরা জানি, বায়ুদূষণ এখন বিশ্বের বৃহত্তম পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব অনেক। দূষণের ফলে সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা ও সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর। আমাদের জীবনে এমন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে যে, খুব দ্রুত যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করা যায়; তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি অসুস্থ প্রজন্ম হিসেবে বেড়ে উঠবে। বায়ুদূষণ যতই বাড়বে ততই নির্মল বায়ুর অভাবে নিশ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। বায়ুদূষণ ভবিষ্যত মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দাঁড়াবে।

বায়ুদূষণ রোধে যেমন জনসচেতনতা দরকার, তেমনি দরকার নগরায়ণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা। একটি শহরকে উন্নয়নশীল করার আগে সেই শহরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা থাকাটা বেশি প্রয়োজন। তাই দূষণ পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হয়ে আসতে হবে সেই কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। উন্নত জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। প্রচুর বনায়ন করতে হবে। নির্মাণকাজগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে করতে হবে, যেন সেটি দূষণের কারণ না হয়। শুষ্ক মৌসুমে দূষিত শহরগুলোয় দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাক ব্যবহার করা। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির সেন্ড ব্লকের প্রচলন বাড়াতে হবে। এর পাশাপাশি বায়ুদূষণ রোধে দেশের সবাই একত্রিতভাবে কাজ করলেই তবেই আমরা দেশে ও শহরকে সুস্থ রাখতে পারব।

লেখক : প্রতিবেদক, সংবাদ প্রকাশ

Link copied!