কয়েক দিন ধরেই বেড়ে চলছে করোনার সংক্রমণ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। বিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০টি দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। পাশের দেশ ভারতেও দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্টটি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বনানী ও বাসাবোতে এখন পর্যন্ত সাত জনের শরীরে ওমিক্রনের শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখনো সভা সমাবেশগুলোতে যে পরিমাণ জনসমাগম ঘটে, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় হয়, তাতে করে ওমিক্রন সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেবে। এর থেকে রক্ষা পেতে সরকারকে শিগগিরই কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। পাশাপাশি দেশে এখনই টিকার বিশেষ কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
দেশে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩১ শতাংশ মানুষ টিকার দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছে। সরকারকে দেশের ৮০ শতাংশ টিকা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এখনই লকডাউন না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড ১৯ জাতীয় পরামর্শ কমিটি।
এদিকে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় সরকার থেকে আসছে বেশ কিছু বিধিনিষেধ। যা কার্যকর হবে সপ্তাহখানিক পর থেকে। বিধি নিষেধে থাকছে, বাসার বাইরে গেলে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরা, হোটেল রেস্তোরাঁয় খাওয়ার যাওয়ার জন্য করোনার টিকার সনদ দেখানো, রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম রাখা, মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে মাস্ক পরিধান করা, অফিসে প্রবেশ এবং অবস্থানকালে বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা, করোনা উপসর্গ/লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও করোনা পজিটিভ রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
সরকারের পক্ষ থেকে নিতে যাওয়া এমন বিধিনিষেধে করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলা কতটুকু কতটুকু কার্যকর, তা নিয়ে কথা হয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীর সঙ্গে। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, সরকারের উচিত করোনার বর্তমান ঢেউ মোকাবেলায় একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা। বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রামণ ৪ শতাংশের নিচে আছে। সেটা ৫ শতাংশের ওপরে গেলে কী পরিকল্পনা থাকবে, আর ১০ শতাংশের উপরে গেলে কী ধরনের পরিকল্পনা থাকবে, তা নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এই পরিকল্পনাগুলো জনগণের সামনে পরিষ্কার করতে হবে। কারণ এই মহামারি সরকারের একার পক্ষে মোকাবেলা সম্ভব নয়। জনগণকে সম্পৃক্ত করে তা মোকাবেলা করতে হবে।
ডা. লেলিন আরো বলেন, “দেশের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক পরা প্রতিদিনকার একটা নৈমিত্তিক কর্মসূচি নিতে হবে সরকারের। সেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করতে হবে।”
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরো বলেন বলেন, “প্রত্যেক পাড়া মহল্লায় স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করতে হবে, যারা স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করবে। পাশাপাশি করোনা শনাক্ত রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া ও তাদের পরিবারের বাজার সদাই করে দিবে এবং মানুষকে টিকা দিতে উৎসাহিত করবে।”
টিকা কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, “দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা নিয়েছে, আর ৫১ শতাংশ মানুষ এক ডোজ টিকা নিয়েছে। করোনার গতিরোধ টানতে মূল জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওয়াতায় নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু এখন যে গতিতে যাচ্ছে, তা অনেক ধীরগতি। আমাদের বর্তমানে একদিনে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টিকা দেওয়া সক্ষমতা আছে। সরকারের উচিত এই সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ১৫ দিনের একটা বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া।”
কোভিড ১৯ জাতীয় পরামর্শ কমিটি সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমাদের এখনই সতর্ক হতে হবে। তা না হলে ওমিক্রন দ্রুত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে যাবে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনার বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানায় যথেষ্ট ঢিলেঢালা ভাব রয়েছে।”
ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা আরো বলেন, “টিকা কার্যক্রম জোরদার থাকায় এখনই আমরা সরকারকে লকডাউন দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি না। আপাতত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।”