• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ সফর ১৪৪৬

গজলডোবা থেকে ছাড়া হয়েছে পানি, ফুঁসে উঠছে তিস্তা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ১২:১৭ পিএম
গজলডোবা থেকে ছাড়া হয়েছে পানি, ফুঁসে উঠছে তিস্তা
ছবি : সংগৃহীত

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ভারতের জলপাইগুড়ির গজলডোবা নামক স্থানে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত তিস্তা ব্যারেজ থেকে পানি ছাড়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে। এতে উজানের ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে নীলফামারীতে প্লাবিত হয়েছে নিচু এলাকা। নদীর পানির গতি স্বাভাবিক রাখতে খুলে রাখা হয়েছে নীলফামারীর ডালিয়ায় অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি স্লুইস গেট।


উজানের ঢল ও বৃষ্টিতে দেশের নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। তিস্তা, পদ্মা ও যমুনার পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি বা এর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে অন্তত ১২ জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় ডুবে গেছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও চরাঞ্চল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বুধবার সর্বশেষ বুলেটিনে বলেছে, “লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তলিয়ে গেছে আমন ধান ও সবজির খেত। ঘরের ভেতরে পানি ঢোকায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।

রাজশাহী নগরীতে পদ্মার পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শহরের উত্তর প্রান্তের এলাকাগুলোতে একটু বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে থাকছে পথঘাট। দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার পানি উপচে ঢুকেছে অনেক বসতবাড়িতে।

নগরীর পঞ্চবটি খড়বোনার বাসিন্দা হালিমা বেগমের ঘরে এখন হাঁটুপানি। রান্নার জন্য চুলা উঠিয়ে রেখেছেন চৌকির ওপর। পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি। এলাকার বাসিন্দা মাজেরা বিবি বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে পানির ভেতরেই আছি। কিছু করার নেই। তাকিয়ে আছি, কবে পানি নামবে। পানিতে থেকে হাত-পা সব ঘা হয়ে গেছে।’

রাজশাহীর বাঘায় পানিবন্দি পদ্মার ১৫টি চরে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ১৫ চরে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি। অধিকাংশ বাড়ির টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে আছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ মাসের শেষ সপ্তাহে বা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বন্যা আতঙ্কে রয়েছেন যমুনা পারের মানুষ। বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং আগামী তিন দিনের মধ্যে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অথবা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, বন্যার আশঙ্কা থাকলেও এলাকাবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

নাটোরের লালপুরে পদ্মার পানি বেড়ে চরাঞ্চলের প্রায় ৫১৮ হেক্টর ফসল ডুবে গেছে। প্লাবিত হয়েছে ১৮টি গ্রামের ৫ শতাধিক বসতবাড়ি। নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিফাত করিম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ঈশ্বরদী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির লেভেল ১২ দশমিক ৯০ মিটার ছিল। বর্তমানে লালপুরে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার সরেজমিন পদ্মার চর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েকদিন পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার নওশারা সুলতানপুর, চাকলা বিনোদপুর, দিয়াড়শংকরপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর ও মোহরকয়া আংশিকসহ প্রায় ১৮টি চর এলাকা প্লাবিত হয়ে বসতবাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফুঁসে উঠেছে তিস্তা

ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও গজলডোবা থেকে পানি ছাড়ার রেশে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদী আরও ফুঁসে উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেলা ৩টায় ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, তিস্তা অববাহিকা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সূত্রমতে, উজানে ভারতের গজলডোবা তিস্তা ব্যারাজ থেকে বৃহস্পতিবার প্রায় ৪ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হয়। পানি ছাড়া অব্যাহত থাকলে তিস্তার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে।

কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা, বহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের কৃষি জমি। বন্যা মোকাবিলায় বন্যাপ্রবণ ৬ উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে জেলা প্রশাসন।

তিস্তার পানি বৃদ্ধি ও টানা বৃষ্টিতে নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুর এলাকার তিস্তা অববাহিকার চর ও চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা ছাঁপানী, ঝুনাগাছ ছাঁপানী, গয়াবাড়ী ও জলঢাকার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, সবচেয়ে বড় চর গ্রাম ঝাড়শিঙ্গেশ্বরসহ কয়েকটি চর এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি। ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন জানান, তার এলাকার রাস্তাঘাট, ফসলি জমি এখন প্লাবিত। এ ছাড়া তিস্তার বন্যার পানিতে ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি।

উল্লেখ্য, চলতি বছর তিস্তা এ নিয়ে তিন দফায় বিপৎসীমা অতিক্রম করল। গত ২৯ জুলাই রাতে ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল, যা টানা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ছিল। এরপর গত ৩ আগস্ট তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দুই দিন পর পানি নেমে যায়।

Link copied!