জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে ‘ব্যক্তিগত সফরে’ কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় দলটি। বুধবার (৬ আগস্ট) পাঠানো নোটিশটি পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদেরকে ওই সফরের কারণ দর্শানোর কথা বলেছে এনসিপি। নোটিশে না জানিয়ে কক্সবাজার যাওয়ার দাবি করা হলেও তা অস্বীকার করেছেন দলটির অন্যতম নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি দাবি করেন, নাসীরউদ্দীনের মাধ্যমে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জানিয়েই কক্সবাজার গিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেলে শোকজের জবাবে তিনি অভিযোগ করেছেন, বিমানবন্দর থেকে শুরু করে প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালিয়েছে। এসব তথ্য ও ভিডিও কিছু সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দিয়ে তা অপরাধমূলক কাহিনির মতো সাজানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
হাসনাত বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ছবি ও ভিডিও করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মিডিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। কিছু মিডিয়া সেখানে ক্রাইম মুভির মিউজিক জুড়ে দিয়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগসহ তা উপস্থাপন করেছে।’
তিনি দাবি করেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের যোগসাজশে তাদের কার্যক্রমকে অপরাধপ্রবণ ও সন্দেহজনক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এমনকি একটি গুজবও ছড়ানো হয় যে তারা ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে ‘গণতন্ত্রবিরোধী গোপন বৈঠকে’ যাচ্ছিলেন, যদিও সে সময় পিটার হাস বাংলাদেশেই ছিলেন না।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রবণতা, যেখানে কাউকে টার্গেট করে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে ফেলা যায়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না।’ তিনি এটিকে ‘ডিমোনাইজেশন টেকনিক’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, আজ তা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হলেও ভবিষ্যতে অন্য যে কারও বিরুদ্ধেও ব্যবহার হতে পারে।
তিনি আরও যোগ করেন, ‘সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু মিডিয়া আগেও এই একই প্যাটার্নে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। হাসিনার আমলেও এ ধরনের প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন দেখা গেছে। নতুন বাংলাদেশেও এই অপরাধপ্রবণতা বহাল থাকায় আমি একইসাথে অবাক এবং ক্ষুব্ধ।’
ঘটনার সবচেয়ে দুঃখজনক দিক হিসেবে হাসনাত উল্লেখ করেন তাসনিম জারার বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘নগ্ন ও কুরুচিপূর্ণ স্লাটশেইমিং’। তিনি বলেন, ‘শুধু নারী হওয়ার কারণে তাসনিম জারাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অশালীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চালানো হয়েছে।’
কিছু মিডিয়ার ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তাসনিমকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর ও আপত্তিকর শিরোনাম প্রকাশ করেছে কিছু মিডিয়া। গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের সমন্বিত এই আক্রমণ একজন নারীকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা। আমার বিশ্বাস, এর উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আগ্রহী নারীদের নিরুৎসাহিত করা।’