আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও চাঙা হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যেই সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে।
ঘোষণাটিকে 'ঐতিহাসিক' বলে বর্ণনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে আয়োজনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বুধবার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, এই পত্রের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো।
তবে বুধবার চিঠি পাওয়ার আগেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছিলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
“আমরা আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকলেও আমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে যাচ্ছে,” বুধবার নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেছেন, ২০২৬ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে রমজান মাস শুরুর আগে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি রোজা শুরু হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যেই ভোট সম্পন্ন করতে হবে।
কিন্তু ঠিক কত তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেটি জানা যাবে কবে?
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোটের আয়োজন সম্পন্ন করার জন্য আগামী ছয় মাসে কী কী কাজ সম্পন্ন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে?
সাধারণত ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার অন্তত বছরখানেক আগে এই রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে এবার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আয়োজন করতে হচ্ছে কমিশনকে। ফলে রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য খুব বেশি সময় তাদের হাতে নেই।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এতদিন বলে আসছিল যে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সরকার ভোটের ব্যাপারে চূড়ান্ত সময়সীমা নির্ধারণ করতে না পারায় তারা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারছেন না।
কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার সেই সংকট কেটে গেছে। তাহলে কবে ঘোষণা করা হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ?
“নির্বাচনে অনুষ্ঠানের জন্য যেহেতু একটা সময়সীমা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু এবার আমরা আমাদের অ্যাকশনপ্ল্যান ঘোষণা করতে পারব। খুব শিগরির সেটি ঘোষণা করা হবে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
ওই কর্মপরিকল্পনাতে কবে নাগাদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে এবং তফসিলের আগে-পরে কী কী কাজ সম্পন্ন করা হবে, সেটি উল্লেখ করা হবে।
এ ক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার পূর্বে ভোটার তালিকা প্রস্তুত, সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস, নতুন দল নিবন্ধন, নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা, ব্যালট পেপার প্রস্তুত সহ আরও কিছু বিষয় যুক্ত থাকবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
যেকোনো নির্বাচনের আগে সেটির একটি তফসিল ঘোষণা করে থাকে নির্বাচন কমিশন।
"সেখানেই ভোটের জন্য নির্ধারিত দিন-ক্ষণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম।
তবে দিন-তারিখ ছাড়াও প্রার্থীরা কবে থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন, মনোনয়নের কাগজপত্র কত দিনের মধ্যে বাছাই করা হবে, কাগজ বাতিল হলে প্রার্থিতাপ্রত্যাশী ব্যক্তিরা কত দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবে- এ রকম খুঁটিনাটি আরও অনেক বিষয়ে তথ্য দেওয়া থাকে তফসিলে।
এ ছাড়া যারা প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাবেন, তাদের তালিকা কবে নাগাদ ছাপানো হবে, নির্বাচনি প্রচারণা কবে থেকে শুরু করা যাবে আর কত দিন পর্যন্ত তা চালানো যাবে, নির্বাচনের দিন ক'টার সময় ভোট শুরু হয়ে কতক্ষণ চলবে, ভোট শেষে কোথায়-কীভাবে ভোট গণনা করা হবে, তফসিলে সেটিরও উল্লেখ থাকে।
নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দেড় থেকে দুই মাস আগে সেটার তফসিল ঘোষণা করা হয়ে থাকে।
"ভোটের যে তারিখ ঠিক হবে, তার দু'মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে," বলেন মি. উদ্দিন।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
সেই হিসেবে আগামী ডিসেম্বর মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে বিবিসি বাংলাকে ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
"বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে ওই সময়ে (ডিসেম্বরে) ঘোষণা হতে পারে," বিবিসি বাংলাকে বলেন নির্বাচন কমিশনার মি. সরকার। সূত্র: বিবিসি বাংলা