• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

তাপপ্রবাহে বিপদের বার্তা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪, ০৯:০৪ পিএম
তাপপ্রবাহে বিপদের বার্তা

তাপপ্রবাহ রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন-জীবিকা ফেলে দিয়ে চরম হুমকিতে। কংক্রিট আর তাপপ্রতিফলক গ্লাসযুক্ত লাখ লাখ ভবনের কারণে নগর, মহানগরে গরমের ভয়াবহ অনেক বেশি। বিপরীতে প্রান্তিক বা পল্লী এলাকায় গরমের তীব্রতা অপেক্ষাকৃত কম। শহুরে বাসিন্দারা শীতলকারক যন্ত্রের সাহায্যে গরম ঠেকাতে পারলেও গ্রামের মানুষের সে সাধ্য, সক্ষমতা নেই। তবে কয়েক বছরে সেই চিত্রের বদল ঘটছে। এখন গ্রামেও পড়ছে তীব্র গরম। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় তাপপ্রবাহের বিপদ তৈরি হয়েছে।

তথ্যমতে, চলতি মৌসুমের শীতকাল বেশ দীর্ঘ ছিল। গোটা মার্চ মাস ছিল অনেকটা উত্তাপহীন। কয়েক দফায় বর্ষা মৌসুমের মতো বৃষ্টিও হয়েছে। তবে এপ্রিলের শুরুতেই প্রকৃতির সে ঠাণ্ডাভাব হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। তীব্র রোদ আর গরমে পুড়তে থাকে নগর আর গ্রাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্য বছরগুলোতে মার্চের শুরুতেই গরম পড়তে দেখা গেলেও এবার একমাস পেরিয়ে এপ্রিলে শুরু হয়েছে গরম। চলতি বছরেও তাপমাত্রা গেল বছরের মতো ৪০ ডিগ্রির কোঠায় থাকবে।

ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশের চারটি বিভাগে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বুধবার (৩ এপ্রিল) আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালকের পক্ষে আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকতে পারে ও বিস্তার লাভ করতে পারে। ফলে এসব অঞ্চলে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।

তাপমাত্রা অনেকটা কম থাকার পরেও হিট অ্যালার্ট দেওয়ার বিষয় ব্যাখ্যা করে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, এখন কম থাকলেও আগামী দুদিন তাপমাত্রা বাড়বে। যে কারণে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি এপ্রিলে ছয়টির মতো তাপপ্রবাহের শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হতে পারে অতিতীব্র। যাতে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে সেই তাপপ্রবাহ আরো বেশি দীর্ঘায়িত হবে কিনা তা পূর্বাভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

অতীতের রেকর্ড ভেঙে গেল বছরে দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে দেশের ‍ওপর দিয়ে। যা ছিল আবহাওয়াবিদদের কাছে উদ্বেগজনক। কারণ, তাপপ্রবাহ এতটাই বেশি ছিল যে মানুষের সহ্য ক্ষমতা অনেক ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ফলে জনজীবন নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। এমন দীর্ঘ সময়ের তাপপ্রবাহকে অস্বাভাবিক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহন কুমার দাশ। তিনি বলেছিলেন, ১৪ দিন ধরে টানা তাপপ্রবাহ চলতে থাকা অস্বাভাবিক। কারণ ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে বাংলাদেশে তাপপ্রবাহ চারদিন থেকে সর্বোচ্চ আটদিন স্থায়ী হয়।

এবছর এপ্রিলের শুরুতেই বইতে শুরু করেছে তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রকৃতিতে আগুন ঝরিয়ে দিচ্ছে সূর্যের উত্তাপ। সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। শ্রমিকরা তীব্র রোদে গামছা মাথায় দিয়ে কাজ করছেন। রিকশা ও যানচালকরা হাঁসফাঁস করছেন। চাকরিজীবীরা বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা নিয়ে বেরুচ্ছেন। শহুরে শ্রমজীবীদের অনেকে সূর্যের তীব্রতা থেকে বাঁচতে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে গাছগাছালির ছায়ার নিচে বিশ্রাম নিচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন রোজাদাররা।

Link copied!