• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

অবরোধের প্রভাব নেই রাজধানীতে, যান চলাচল স্বাভাবিক


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৩, ০২:০৪ পিএম
অবরোধের প্রভাব নেই রাজধানীতে, যান চলাচল স্বাভাবিক
রাজধানীতে অবরোধের দিনেও চলছে গাড়ি। সংবাদ প্রকাশের ফাইল ছবি

সরকারের পদত্যাগ এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে অবৈধ ঘোষণা করে তা প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলের সপ্তম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলছে। রোববার (২৬ নভেম্বর) সকাল ৬টায় শুরু হওয়া এ অবরোধ চলবে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত। অবরোধ শুরুর আগের রাতে (শনিবার) সন্ধ্যায় উত্তরার হাউজবিল্ডিং মোড়ে বিআরটিসির একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

রোববার (২৬ নভেম্বর) ভোর থেকেই রাজধানীতে অবরোধের তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। নগরীর ছোট-বড় সড়কে ব্যক্তিগত যানবাহন ও যাত্রীবাহী পরিবহনে যানজটের দৃশ্য দেখা গেছে। পরিবহন সহকারীদের যাত্রী ডাকা-ডাকির হাঁকডাক অবরোধের দিনেও ছিল চোখে পড়ার মতো।

গাজীপুর-সায়েদাবাদগামী বলাকা পরিবহনে করে মো. রুবেল শেখ উত্তরার জসিমউদ্দিন থেকে মহাখালী সাতরাস্তায় এসেছেন ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটে। অথচ অবরোধের অন্যান্য দিনে সময় লাগে খুব বেশি হলে ৪০ মিনিট। সড়কে যানজট থাকায় ৪০ মিনিট সময় বেশি লাগায় চালকের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায় তাকে।

বাকবিতণ্ডার কারণ জানতে চাইলে মো. রুবেল শেখ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সকালে অফিস সময়। বাসে উঠলে তারা যেখানে-সেখানে যাত্রীর জন্য বাস দাঁড় করিয়ে বসে থাকে। যাত্রী থাকলেও দাঁড়িয়ে থাকে, না থাকলেও দাঁড়িয়ে থাকে। যেটা আমাদের অফিসের সময়ের ক্ষেত্রে অপচয়।”

তিনি আরও বলেন, “অবরোধের দিন উত্তরার জসিমউদ্দিন থেকে মহাখালীর সাতরাস্তায় আসতে সময় লেগেছে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট। অথচ অবরোধের দিনে এত সময় লাগার কথা না। একদিকে যানজটে সময় গেছে, অন্যদিকে যত্রতত্র যাত্রী নেওয়ায় সময় গেছে। চালকের সময় গেলেই কি আর না গেলেই কি, তাদের কাছে সময়ের কোনো মূল্য নেই। তারা এ দেশের রাজা-বাদশা, জমিদার।”

এদিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখায় পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের প্রসংশা করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিগত দিনের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা বাড়ায় খুশি কাউন্টারে দায়িত্বরতরাও।

তারা বলছেন, বিগত দিনে যাত্রী সংকট থাকলেও এখন যাত্রীরা টার্মিনালে আসতে শুরু করেছে। পরিবহন মালিক সমিতি থেকে কাউন্টার খুলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই কাউন্টার খোলা রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে যাত্রীদের উপস্থিতিতে টিকিট বিক্রি করে যথাসময়ে বাস দূরপাল্লার উদ্দেশ্য রওনা হচ্ছে।

বাড়ি যাওয়ার আনন্দে মোবাইলে বাড়িতে কথা বলতে দেখা যায় রবিন নামের এক যাত্রীকে। যথাসময়ে বাস আসায় খুশি হয়ে তড়িঘড়িতে বাসে উঠেন তিনি। বাসে উঠার সময়ে সংবাদ প্রকাশের সাথে কথা হলে রবিন বলেন, “অনেক দিন পর বাড়ি যাচ্ছি। ভেবেছিলাম বাস পাবো না। কিন্তু বাস চলাচল স্বাভাবিকও আছে আবার যথাসময়ে বাসও এসেছে। বাস এসেছে এখন যাই আরেক দিন আপনার সাথে কথা বলবো।”

অন্যদিকে ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক দেখা গেছে। সরেজমিনে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় এবং টিকিট কাউন্টারে সাধারণ যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে হিমশিম অবস্থা সংশ্লিষ্টদের। যাত্রীদের জানমালের কথা বিবেচনা করে নেওয়া হয়েছে সব রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

স্টেশনের প্রবেশ মুখে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানে রয়েছি। স্টেশনের প্লাটফর্ম থেকে শুরু করে বাহিরেও আমাদের সদস্যরা আছে। যেন কোনো ধরনের নাশকতা বা বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।”

রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছেন ছাইদুল ইসলাম। গন্তব্য রংপুরের কুড়িগ্রাম। দূরপাল্লার বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ট্রেন যাত্রায় স্বস্তি ভেবে রেলপথকে বেছে নিয়েছেন তিনি। অবরোধে দেশের জনগণের কথা রাজনৈতিক দলগুলো চিন্তা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

ছাইদুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমি মনে করি রেলপথ সুরক্ষিত এবং স্বস্তি ও আরামদায়ক। একজন অসুস্থ মানুষ ট্রেনে করে যাত্রা করলে অনেকটাই সুস্থ হয়ে যাবে আশা করি। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকায় আমরা খুব খুশি।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিলে টানা হরতাল-অবরোধ দিয়েই চলছে। অথচ তাদের আমরা মাঠে নামতে দেখছি না। ফেসবুক ভিডিওতে হরতাল-অবরোধ ঘোষণা দিয়ে ঘরে বসে থাকলে তো রাজনীতি হবে না। রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে না। হরতাল-অবরোধে আমাদের কি কষ্ট হয় তারা বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকে।”

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমাদের ট্রেন যথাসময়ে ছাড়ছে। আমরা অবরোধেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি।”

Link copied!