প্লট বা ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তর (বিক্রয়, দান বা বন্ধক) প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিনের জটিলতা ও দুর্নীতি দূর করতে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন থেকে প্লট বা ফ্ল্যাট হস্তান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (যেমন রাজউক, এনএইচএ ইত্যাদি) থেকে পূর্বানুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে গত সোমবার (১০ নভেম্বর) গেজেট আকারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন এই বিধিমালা গেজেট প্রকাশের দিন থেকে অবিলম্বে কার্যকর বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়— গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা কর্তৃক উন্নয়নকৃত আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাট হস্তান্তরের পরবর্তী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সেবা সহজীকরণ, দীর্ঘসূত্রতা, দুর্ভোগ ও হয়রানি লাঘব এবং দুর্নীতি দূরীকরণের লক্ষ্যে নিম্নরূপ বিধান প্রণয়ন ও পদ্ধতি নিরূপণ পরিবর্তন করা হলো।
৭টি বিধিমালা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হলো—
১. গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা কর্তৃক উন্নয়নকৃত ও বরাদ্দকৃত আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার, ক্রয়, দান বা অন্য সূত্রে নামজারি; হস্তান্তর (বিক্রয়, দান, বন্ধক বা বাতিল) দলিল সম্পাদন বা বাতিল; আম-মোক্তার দলিল সম্পাদন বা বাতিল এবং ঋণ গ্রহণের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন গ্রহণের বিধান বাতিল করা হলো। এ প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে উপরোক্ত কার্যসমূহের জন্য তফশিলভুক্ত সব আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজন হবে না। তবে নিজ দলিলের অন্যান্য শর্ত যেমন- কোনো শর্তের বিলোপন বা একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাটের একসঙ্গে প্রাপ্তির আয়তনের পরিবর্তন এবং প্লট বা ফ্ল্যাটের ব্যবহার শ্রেণির পরিবর্তন অথবা আংশিক প্লট বা ফ্ল্যাটের ব্যবহারের শ্রেণির পরিবর্তনজনিত কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণের বর্তমান পদ্ধতি বহাল থাকবে।
২. দলিলগ্রহীতাকে উন্নয়নকৃত প্লট বা ভবনের ভূমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ২ শতাংশ হারে এবং শুধু প্লট বা ভূমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৫ শতাংশ হারে অর্থ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রেশন ফির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুকূলে জমা প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতিবার মালিকানা হস্তান্তরের জন্য একই হারে ও পদ্ধতিতে মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে নন-ট্যাক্স রেভিনিউ (এনটিআর) হিসেবে আদায় করা হবে।
৩. লিজকৃত সম্পত্তির মালিকানা পরিবর্তন এবং মালিকানা রেকর্ড লিজদাতা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ ও হালনাগাদ রাখার লক্ষ্যে প্লট বা ফ্ল্যাট হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিল সম্পাদনের পর একজন বিক্রেতা এক কপি (ফটোকপি কপি) এবং নামজারির পর এ সম্পর্কিত রেকর্ডও ক্রেতা বা, কেএম, কেএমডি, দলিলগ্রহীতা কর্তৃক দলিল সম্পাদনের ৯০ দিনের মধ্যে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানে দাখিল করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাখিল করতে ব্যর্থ হলে দৈনিক ৫০ টাকা হারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা থাকবে। হস্তান্তর দলিল বা নামজারি রেকর্ড লিজদাতা প্রতিষ্ঠানে দাখিলের ৩০ দিনের মধ্যে মালিকানা রেকর্ড হালনাগাদ করতে হবে। হালনাগাদকৃত রেকর্ডও রেজিস্টার্ড ডাকের পাশাপাশি ই-মেইল বা ইলেকট্রনিক অন্য কোনো মাধ্যমে ক্রেতা বা ক্ষেত্রমতো দলিল গ্রহীতাকে অবহিত ও প্রেরণ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে তা পরিপালনে ব্যর্থ হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
৪. লিজ দলিলের মেয়াদ শেষে (নিরানব্বই বছর পর) তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়নকৃত বলে গণ্য হবে এবং অনুচ্ছেদ (২) এ বর্ণিত হস্তান্তর ফি আদায়ও রহিত হয়ে যাবে। তবে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের পূর্বানুমতি ছাড়া প্লটের বিভাজন বা একাধিক প্লটের একত্রিকরণ, প্লট বা ফ্ল্যাটের ব্যবহার শ্রেণি পরিবর্তনসহ মাস্টারপ্ল্যানের কোনো পরিবর্তন করা যাবে না।
৫. আবাসিক ব্যতীত অন্যান্য (প্রাতিষ্ঠানিক, বাণিজ্য ও শিল্প) প্লট, ফ্ল্যাট বা স্পেসের হস্তান্তর ও নামজারিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে লিজদাতা কর্তৃপক্ষ থেকে গ্রহণের বিদ্যমান বিধান বহাল থাকবে।
৬. যেসব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে এবং বিরোধে সরকারের স্বার্থের সংশ্লেষ রয়েছে; সেসব প্লট ফ্ল্যাট বা বাড়ি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে অথচ ২৮/০৩/১৯৮৮ তারিখের পর পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত করা হয়নি; এবং সেসব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাট জানুয়ারি ২০০৯ থেকে জুলাই ২০২৪ মেয়াদে বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেসব প্লট, ফ্ল্যাট বা বাড়ির ক্ষেত্রে লিজদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন গ্রহণের বিদ্যমান প্রথা বহাল থাকবে। এ অনুচ্ছেদের অধীন লিজদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর অনুচ্ছেদ (২)-এ বর্ণিত পদ্ধতি ও হারে ক্রেতা বা ক্ষেত্রমতো দলিলগ্রহীতাকে প্রযোজ্য ফি পরিশোধ করতে হবে।
৭. ওপরে বর্ণিত বিধিমালার আলোকে যেসব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার, ক্রয়, দান বা হেবা সূত্রে নামজারি; হস্তান্তর (বিক্রয়, দান, হেবা বা বণ্টন) দলিল সম্পাদন বা বাতিল; আম-মোক্তার দলিল সম্পাদন বা বাতিল এবং ঋণ গ্রহণের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজন হবে না, সেসব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের তালিকা এ প্রজ্ঞাপনের অধীন, যথাশিগগির সম্ভব, তফশিল আকারে প্রকাশ করা হবে। তবে প্রকাশিত তফশিলে পরবর্তীতে কোনো ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা সংশোধনের ক্ষমতা কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করেন।






























