• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ মুহররম ১৪৪৬

দুর্নীতি নয়, মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি: প্রধানমন্ত্রী


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৩, ০৫:৩৩ পিএম
দুর্নীতি নয়, মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি: প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতি করতে নয়, মানুষের ভাগ্য গড়তেই ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, “বাবা-মা ও পরিবার হারিয়ে এদেশে দুর্নীতি করতে ফিরে আসিনি। এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি।”

রোববার (১ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মাসব্যাপী ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ-২০২৩) উদ্বোধনকালে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। একটি টাকাও রিজার্ভ ছিল না সেই সময়, কোনো কারেন্সি ছিল না। সেই অবস্থা থেকে তিনি দেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশ গড়তে পেরেছি, এটাই আমাদের অর্জন।”

দেশের চাহিদা মিটিয়ে কৃষিপণ্য এবং খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রবৃদ্ধি ও মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে

শেখ হাসিনা বলেন, “টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। এছাড়া প্রবৃদ্ধি ও মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার তৈরির দিকে ব্যবসায়ীদের নজর দিতে হবে।”

বাণিজ্য বাড়াতে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে গুরুত্বারোপ

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরির জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। সেজন্য সরকার রাজনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর জোর দিয়েছে।”

নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে অনেক দেশের অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় থাকলেও বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “দেশের শিল্প-বাণিজ্য সম্প্রসারণে সরকার কাজ করছে।”

ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তবে কেউ সরকার নির্ধারিত জায়গার বাইরে শিল্প কারখানা করলে কোনো সহযোগিতা করা হবে না বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে পণ্যের বহুমুখী বাজার তৈরি জরুরি।”

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেই লক্ষে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে দেশের অর্থনীতি ও ভালো অবস্থায় আছে বলে জানান শেখ হাসিনা। জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে তেল আমদানির চেষ্টা হচ্ছে। এবছর বাণিজ্য মেলায় ও পাটজাত পণ্যকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।

ডিপ্লোমেসি পলিটিক্যাল নয়, ইকোনমিক হবে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখনকার ডিপ্লোমেসি (কূটনীতি) পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি না, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি হবে। প্রত্যকটা দূতাবাসকে রপ্তানি বাণিজ্য, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, আমরা কী রপ্তানি করতে পারি বা কোথায় থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার নিদের্শ দিয়েছি। আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি, ওই এলাকার বাংলাদেশের যারা রাষ্ট্রদূত তাদের ডেকে সেভাবে ব্রিফ করেছি। আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সেটা বলে দেওয়া আছে। দূতাবাস চেষ্টা করবে, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা আছে। আমরা সেটাই রপ্তানি করতে চেষ্টা করব। এভাবেই বাণিজ্য বৃদ্ধি করব।”

আওয়ামী লীগ মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছে

আওয়ামী লীগ ‘দুর্নীতি নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে ক্ষমতায় এসেছে’ বলে উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “বাবা-মা ও পরিবার হারিয়ে এদেশে দুর্নীতি করতে ফিরে আসিনি। এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। সব হারিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে এসেছি, এটাই আমার লক্ষ্য। ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সরকারের একটি নীতিমালা ছিল ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা, সেটাই করেছি।”

কৃষি ও খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলতে হবে

দেশের চাহিদা মিটিয়ে কৃষিপণ্য ও খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, “জনগণের টাকায় এতো বেশি ভর্তুকি দিয়ে আর চালু রাখা সম্ভব নয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার তৈরির দিকে নজর দিতে হবে আপনাদের (ব্যবসায়ীদের)।”

অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫-জি চালু করা হবে

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে ৫-জি চালু করা হবে। শিল্প-কারখানা অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে, বাইরে করলে কোনো সার্ভিস পাবেন না।”

গ্যাস-বিদ্যুতে উৎপাদন খরচ দিতে হবে

নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতে ব্যবসায়ীদের এ সংক্রান্ত ক্রয় বা উৎপাদন খরচ দিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ আর গ্যাস যদি একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন চান তবে এগুলো কিনতে বা উৎপাদন করতে যে খরচ হবে সেই মূল্য দিতে হবে। কত আর ভর্তুকি দেওয়া যাবে? ভর্তুকি তো জনগণের পয়সায় এত বেশি দেওয়া যায় না। কাজেই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের এ বিষয়ে অন্তত একটু নজর দিতে হবে।”

গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারে দেশবাসীকে সাশ্রয়ী হতে আহ্বান জানান তিনি। এ সময় করোনাভাইরাস সংক্রমণকালীন রপ্তানিসহ বিভিন্ন প্যাকেজে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

নতুন বাজার খোঁজতে হবে

রপ্তানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি ও পণ্য বহুমুখীকরণ, খাদ্য প্রকিয়াজাতকরণ শিল্পের দিকে মনোযোগী হতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্য খুব সীমিত। কিছু এর ওপর আমরা খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এটা বহুমুখী করার কথা; আমি বারবার এ কথা বলে যাচ্ছি। বহুমুখী করা ও আমরা যত বেশি বাজার পাব, তত বেশি আমরা পণ্য রপ্তানি করতে পারব। ‘বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী’ এ কথা আদিকাল থেকে শুনে আসছি। সেটাই আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের কর্ম ক্ষমতা যাতে বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।”

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটা মিশনে বাণিজ্যিক উইং খোলা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “এগুলো খোলা হয়েছে যাতে করে আমরা আমাদের বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি করতে পারি।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি বা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইসচেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান। পরে মেলায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।

Link copied!