• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

প্রলম্বিত উন্নয়নকাজে দুর্ভোগ বাড়ছেই


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২৩, ০৯:৫৫ পিএম
প্রলম্বিত উন্নয়নকাজে দুর্ভোগ বাড়ছেই
রাজধানীর হাতিরঝিল সংলগ্ন মহানগর এলাকার একটি সড়ক। ছবি-সংবাদ প্রকাশ

পদে পদে উন্নয়ন দুর্ভোগ। বিষিয়ে তুলেছে রাজধানীবাসীকে। ভুক্তভোগীরা অসহায়-নিরুপায়। কেউই তাদের পাশে নেই। সবরকমের কর, বাড়তি বাড়ি ভাড়া, নগর পরিবহনে নৈরাজ্য- এসব মেনে নিয়েও মাটিকামড়ে সয়ে যাচ্ছে এই নগরের মানুষ। সেবা-সুবিধাসহ নানা কিছুতে বঞ্চনা পেতে হয় নগরবাসীকে। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে ভালো সময়টুকুর অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার নেই এই আমনাগরিকদের। তবু ভাগ্যের সিঁকে ছিড়ছে না তাদের। দিন দিন উন্নয়ন যত প্রলম্বিত হচ্ছে দুর্ভোগও বিস্তৃত হচ্ছে তত।

রাজধানীর ঢাকার উন্নয়নে বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি নতুন খবর নয়। তবে এর যেন সমাপ্তি নেই। অতিষ্ঠ নগরবাসীর দুর্ভোগের মাত্রা ধারাবাহিকভাবে কেবল বাড়ছেই। একই সড়কে বারবার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। যে কারণে গাড়ির গতি থাকে না, সড়কজুড়ে যানজট আর যানজট। আবার খোঁড়া সড়ক মাসের পর মাস সংস্কার না হওয়ায় বৃষ্টিতে জমে থাকা কাদাপানি লেপ্টে যায় বিস্তৃত স্থানে। 

প্রখর রোদে তা পরিণত হয় মিহিধুলোতে। বাতাস আর গাড়ির ঝাপটায় বায়ুস্তর হয়ে যায় ধুলিকুণ্ডলি। পথচারিরা স্বস্তির নিঃশ্বাসগ্রহণের বদলে ধুলিগ্রহণ করছে নিশ্বাসে-নিশ্বাসে। মেঘাসিটি ঢাকার অলি-গলিতে এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় প্রতিনিয়ত।

প্রধান সড়কগুলোতে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ইন্টারনেট, ওয়াসার লাইন, ডিপিডিসি, ডেসকো, তিতাসসহ সেবা সংস্থার কাজ বছরজুড়ে লেগেই থাকে। সমন্বয়হীনতার অভাবে একই সড়কে বারবার খোঁড়াখুঁড়ি চলমান থাকে বলে অভিযোগ নগরবাসীর।  

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর হাতিরঝিলের মহানগর, বাড্ডা এলাকার সরদার লেন, পল্টন , ফকিরাপুল ও কমলাপুর সড়কের যে অংশ কাটা হয়েছে, সে অংশ দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা বা যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে আশপাশের সড়কে যানজট লেগেই আছে। তার ওপর প্রতিদিন বৃষ্টি হওয়ায় সড়কগুলোতে পানি জমে জনসাধারণের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে প্রতিদিন।

হাতিঝিল এলাকায় দেখা গেছে, মাটির নিচ দিয়ে ডেসকোর বিদ্যুতের লাইন নেওয়ায় এলাকার সবকটি সড়ক কাটা ও খোঁড়া হয়েছে। যে কারণে এই এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। সড়কের একপাশ কেটে রাখার কারণে বাকি অংশ (সামান্য জায়গা) দিয়ে রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ও প্রাইভেটকার পার হতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাটির চারভাগের দুই ভাগই বন্ধ হয়ে আছে।

মহানগর এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “পুরো রাজধানীজুড়ে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির উৎসব চলছে। বিভিন্ন কাজের জন্য এক রাস্তা একাধিকবার খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। বিভিন্ন সেবা সংস্থা তাদের কাজের জন্য একবার রাস্তা খুঁড়ে কাজ করে, আবার কিছুদিন পর অন্য সংস্থা তাদের কাজের জন্য আবার একই সড়ক খোঁড়ে। এতে এলাকাবাসীকে বারবার ভোগান্তি পোহাতে হয়।”

হাতিরঝিল প্রকল্পের দক্ষিণ অংশজুড়ে লাইন বসানোর পর সড়কের বিশাল অংশের বেহাল অবস্থা। ছবি-সংবাদ প্রকাশ

কমলাপুর এলাকার ব্যবসায়ী মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘদিন মেট্রোরেলের কাজ চলায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যানজট ও ধুলাবালিতে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। মনে হয় আমাদের এই দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই।”

কমলাপুর এলাকার আরেক ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমাদের এলাকার সড়ক খুঁড়ে রাখা হয়েছে অনেক দিন হলো। উন্নয়নের ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাটা সড়কে পানি জমে যায়। রাস্তা পার হওয়া যায় না। আর মাটি কাঁদা হয়ে থাকে সব সময়। মেট্রোরেলের কাজ চলার সময় সড়ক কাটা হয়। পিলারের কাজ শেষ হলেও এখনো রাস্তা সংস্কারের খবর নেই।”

পল্টন এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন  সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “রাস্তা কেটে ড্রেনের লাইন ঠিক করার কাজ চলছে। আমার একটা দোকান আছে সড়কের পাশে। রাস্তা কাটা থাকায় ব্যবসার বারোটা বেজে গেছে। কাস্টমারও আসে না, বেচা-বিক্রিও সেভাবে হয় না। একই রাস্তা বারবার খোঁড়াখুঁড়ি করা হয় উন্নয়ন কাজের জন্য। আমরা উন্নয়নের ভোগান্তি পোহাতে রাজি আছি। তবে এক রাস্তা যেন একবারই কাটা হয়।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ওয়াসার লাইন, ডিপিডিসি, ডেসকোর পাইপলাইন মাটির নিচ দিয়ে বসাতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। এছাড়া সরকারের কিছু মেগা প্রজেক্টের উন্নয়নমূলক কাজ চলায় রাস্তা কাটা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। যেসব রাস্তা কাটা হয়েছে, প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে দ্রুত সময়ের মধ্য গর্ত ভরাট ও কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করবে সিটি কর্পোরেশন। এরপর মানুষের দুর্ভোগ আর থাকবে না।”

তিনি আরও বলেন, “অতি জরুরি ছাড়া কোনো সড়ক কাটা হচ্ছে না। রাস্তা কাটার আগে ওয়ান স্টপ সেলের সভায় অনুমোদন নেওয়া হচ্ছে। এখন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।”

Link copied!