• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

২৯ প্রজাতির মাছ পুনরুদ্ধার করেছে বিএফআরআই


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩, ০৭:৪৮ পিএম
২৯ প্রজাতির মাছ পুনরুদ্ধার করেছে বিএফআরআই
দেশি প্রজাতির মাছ। ফাইল ছবি

দেশের বিলুপ্ত প্রায় ২৯ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ গত ১৪ বছরে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। নতুন স্থাপিত লাইভ জিন ব্যাংকে সেগুলো সংরক্ষণ এবং অন্যান্য বিপন্ন প্রজাতির জাতগুলোর সঙ্গে সেগুলোর পুনরুৎপাদন করা হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বিএফআরআইয়ের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জুলফিকার আলী সংবাদ সংস্থা বাসসকে বলেন, গত ১৪ বছরে বিলুপ্ত প্রায় ২৯ প্রজাতির দেশি মাছ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি আগেই বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ছিল বলে ধারণা করা হতো। 

বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে সেগুলোর প্রজননের লক্ষ্যে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এর লাইভ জিন ব্যাংকে ‘চরম বিপন্ন’ ‘বিপন্ন’ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং হুমকির মুখে থাকা মিঠা পানির মাছের প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য বিএফআরআই কার্যক্রম পরিচালনা করে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের (আইইউসিএন) সর্বশেষ ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট মাছের ৬৪টি প্রজাতি বা ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ ‘হুমকির মুখে’ রয়েছে।

আইইউসিএনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬৪টির মধ্যে নয়টি প্রজাতি ‘গুরুতর বিপন্ন’, ৩০টি ‘বিপন্ন’ এবং পাঁচটি প্রজাতি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। এর আগের ২০০০ সালের মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, ৫৪টি মাছের প্রজাতি হুমকির সম্মুখীন এবং এর মধ্যে ১২টি ‘চরমভাবে বিপন্ন’, ২৮টি ‘বিপন্ন’ এবং ১৪টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’।

আইইউসিএন বাংলাদেশের মোট মাছের প্রজাতির মূল্যায়ন করেছে ২৬৬টি, যার মধ্যে ১৪০টি ছোট মাছ এবং বাকি ১২৬টি আকারে বড়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হ্যাচারি বা কাছাকাছি পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা মৎস্য চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন এবং খোলা পানিতে মাছের প্রজাতি গত কয়েক দশকে তুলনামূলকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

আইইউসিএনের ২০১৫ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘১৯৭০ সাল পর্যন্ত দেশের প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ে উৎপাদিত মিঠা পানির মাছ চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত ছিল। উন্মুক্ত জলাশয়ে উৎপাদিত মাছের উৎপাদন প্রতি বছর ১ দশমিক ২৪ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়ে এখন ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।’ 

এতে আরও বলা হয়েছে, বেশ কয়েকটি মাছের প্রজাতি বিলুপ্তির পথে এবং আরও অনেকগুলো অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্তির মুখোমুখি হচ্ছে।

বিএফআরআই প্রধান আলী বলেন, “আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং অন্যান্য পরিবেশগত বিপর্যয়ের মধ্যে তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে কয়েক বছর ধরে কিছু মাছের জাত বিলুপ্ত হয়ে গেছে।”

কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালিত গবেষণা সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পিএসও) ড. অনুরাধা ভদ্র বলেন, “আইইউসিএনের তালিকাভুক্ত ৬৪টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ প্রজাতির মধ্যে ‘আমরা ৪০ প্রজাতির জার্মপ্লাজম বা জেনেটিক নমুনা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি।”

তিনি বলেন, “বিএফআরআই স্থানীয় মাছের জাত রক্ষায় এবং কৃষকদের কাছে এর প্রজনন প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে মানুষের জন্য মাছের প্রজাতির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে তাদের গবেষণাকে শক্তিশালী করেছে।”

তবে এই কর্মকর্তা আফসোস করেন, বছরের পর বছর প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয়ের কারণে কিছু মাছের প্রজাতি এখন বিলুপ্তির পথে।

তবে ড. ভদ্র বলেন, “লাইভ জিন ব্যাংক স্থানীয় মাছগুলোকে রক্ষা করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে যা একসময় প্রকৃতির একটি অসাধারণ উপহার এবং একটি প্রধান খাদ্যের উৎস ছিল।”

প্রাকৃতিক উৎসে মাছের উৎপাদন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে নীলফামারীতে একটি সাব-স্টেশনসহ ময়মনসিংহে বিএফআরআই প্রধান কার্যালয়ে লাইভ জিন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।

বিএফআরআই বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তারা দুটি জিন ব্যাংকে ১৬২টি বিপন্ন প্রজাতির মাছের জিন সংরক্ষণ করেছেন, এরমধ্যে ১০২টি ছোট এবং দেশীয় মৎস্যসম্পদ।

বিএফআরআইয়ের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, “প্রকৃতি থেকে কোনো প্রজাতি হারিয়ে গেলে, ব্যাংক সেগুলো হ্যাচারিতে প্রজনন করবে এবং প্রাকৃতিক পুনর্জন্মের জন্য উন্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দেবে।”

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম সরদার অবশ্য জিন ব্যাংকের সাহায্যে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বদ্ধ পানিতে প্রজনন করা মাছ এবং উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছের একই স্বাদ আশা না করার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “তবে যখন কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ বিলুপ্তির হুমকির সম্মুখীন হয় তখন জিন ব্যাংকের প্রয়োজন হয়।”

কর্মকর্তারা বলেছেন, মাছ দেশের বার্ষিক প্রোটিন গ্রহণের ৬০ শতাংশ সরবরাহ করে যেখানে মাছের বার্ষিক চাহিদার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মিঠা পানির জাতগুলো পূরণ করে।

বাংলাদেশ ২০০৯ সালে প্রায় ৬৭,০০০ টন ছোট মাছ উৎপাদন করেছিল, চাষের প্রসারের সুবাদে ২০২১ সালে তা বেড়ে ২৬১,০০০ টন হয়েছে।

মাছ উচ্চ মানের প্রোটিন এবং ভিটামিন এ এবং ডি, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম এবং আয়োডিনসহ বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে যখন এগুলো অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি মূল্যবান উৎস এবং এই প্রোটিন সহজেই হজমযোগ্য।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত তিন দশকে বাংলাদেশের মাছের উৎপাদন ছয় গুণ বেড়েছে। ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে, দেশে মাত্র ৭.৫৪ লাখ টন মাছ উৎপাদিত হয়েছিল, যেখানে ২০২০-২১ সালে এই সংখ্যাটি ৪৬.২১ লাখ টন ছাড়িয়েছে।

২০২০-২১ সালে, বাংলাদেশ মৎস্য সম্পদের দিক থেকে বিশ্বব্যাপী তৃতীয় স্থানে ছিল, প্রায় ২০ মিলিয়ন টন মাছ আহরণ করে এবং দেশের জিডিপিতে ৩.৫৭ শতাংশ অবদান রাখে।

বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ৫০টিরও বেশি দেশে মাছ ও মাছ-সম্পর্কিত পণ্য রপ্তানি করে আসছে, ২০২১-২২ সালে মোট ৫৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১ শতাংশের বেশি।
দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত, দেশে মাছের চাহিদা প্রতি বছর প্রায় ৪২ লাখ টন। সূত্র-বাসস 

Link copied!