ভালোবাসা কিংবা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে ফুল এক অনন্য মাধ্যম। ফুল ছাড়া এমন নিবেদন যেন কল্পনাই করা যায় না। তবে নানা প্রতিকূলতায় ভালো নেই রাজধানীর ফুল ব্যবসায়ীরা। একদিকে বর্ষার বৃষ্টি, অন্যদিকে মৌসুম নয় বলে উৎপাদনও কম। এর পাশাপাশি কৃষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব এবং পাইকারি বাজারের নির্ধারিত স্থানের সংকট তো রয়েছেই।
শুক্রবার (২১ জুলাই) সরেজমিনে যাওয়া হয় শাহবাগ এলাকায়। এখানে রয়েছে রাজধানীবাসির অতিপরিচিত ফুলের পাইকারি বাজার। রাস্তার এক পাশজুড়ে রয়েছে অনেকগুলো খুচরা ফুলের দোকান। ফুল ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধার জন্য গড়ে উঠেছে একটি সংগঠনও। এর নাম ‘বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি’।
বাজার ঘুরে জানা যায়, পাইকারি বাজারে গোলাপ প্রতি বান্ডেল (১০০ পিস) বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা দরে। একইভাবে মেরিন্ডা প্রতি বান্ডেল (৩০০ পিস) ১৬০০ টাকা, গাঁদা প্রতি বান্ডেল (৪০০ পিস) ২০০ টাকা, জারবেরা প্রতি বান্ডেল (১০০ পিস) ১৩০০ টাকা এবং রজনীগন্ধা প্রতি পিচ ৪ টাকা দরে।
এদিকে, খুচরা বাজারে গোলাপ এবং মেরিন্ডা প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকা দরে। একইভাবে রজনীগন্ধা প্রতি পিস ৭ থেকে ৮ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ২০ থেকে ২৫ টাকা, গাঁদা প্রতি পিস ২ থেকে আড়াই টাকা, গাজরা একপিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং রজনীগন্ধা ও গোলাপ দিয়ে প্রস্তুতকৃত মালার প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা।
খুচরা ক্রেতারা বলছেন, বাজারে ফুলের দাম বেশি। ফুলের মান নিয়েও রয়েছে তাদের অভিযোগ। 
অপরদিকে, ফ্লাওয়ার সোসাইটির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের ব্যবসা হচ্ছে করোনা কালীন সময়ের মতো। তবে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, চলতি বছরের ব্যবসায়ের থেকে ভালো ছিল করোনকালীন ব্যবসা।
শিখা রানী দেবনাথ ও নিধিতা মজুমদার দুই বান্ধবী এসেছেন শাহবাগে গোলাপ কিনতে। কথা হয় তাদের সঙ্গে। শিখা বলেন, “আজকে ভাইয়ের জন্মদিন। তাই ফুল কিনতে এসেছি। কিন্তু ফুলের অনেক দাম। কিছু গোলাপ কিনব আর কিছু রজনীগন্ধা। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় দোকান ঘুরে ঘুরে নিতে হচ্ছে।”
নাইমুল হক রাসেল নামের এক ব্যক্তি বলেন, “বন্ধুদের সংগঠনে ভোট ছিল। তারা আজকে জয়ী হয়েছেন। তাই তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করব। ফুলের দাম একটু বেশি চাচ্ছেন। তারা বেশি চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের ব্যবসা ছিল ফুলের। তাই আমি বাজার দরটা একটু জানি। তবে বর্তমান যা দাম আছে তা সহনশীল বলা যেতে পারে।”
এম আর ফ্লাওয়ার গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী মহিদ ভূঁইয়া বলেন, “আমাদের মৌসুমী ব্যবসা। বর্তমানে বর্ষাকাল। শীতের মৌসুমে ফুল বেশি হয় আর এখন কম। ফুল একদিনের বেশি তো রাখা যায় না। তাই ফুলের ব্যবসা এখন টুকটাক চলছে। বৃষ্টির পরেই আবার রোদ হচ্ছে। ফলে ফুল নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরিমাণটা একটু বেশি আর দামও একটু বেশি। বাজারে ক্রেতাও কম। সামনে মহরম আছে। মহরমের পর হয়ত একটু ব্যবসা ভালো হবে।”
সুমাইয়া ফ্লাওয়ার গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী রাজু আহমেদ বলেন, “এ বছর ফুলের ব্যবসা খুবই খারাপ। বর্ষায় ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই ফুলের ব্যবসা আগের মতো হচ্ছে না। এখন সকালে ফুল কিনলে বিকালে নষ্ট হয়ে যায়। ক্রেতারা এলে কম দামেও ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে শুধু নষ্ট হওয়ার কারণে।”
সাথী নামের এক ফুল ব্যবসায়ী বলেন, “ফুলের ব্যবসাটা আমাদের খুবই খারাপ। যশোর, নারায়ণগঞ্জ থেকে আসতে আসতে ফুলের মান নষ্ট হয়ে যায়। আর বেচা-কেনাও খুব খারাপ। গরম আর বর্ষার কারণে বাগানে ফুল নষ্ট হয়ে যায়। ওখানে দাম বেশি। খুবই ভোগান্তিতে আছি। এখন ব্যবসা করে শুধু শ্রমিকদের বেতন উঠে লাভ হয় না। পুঁজির টাকাও ব্যবসায় নিয়ে আসতে হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি বাবুল প্রসাদ বলেন, “প্রতি বছর দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ১৫০০ কোটি টাকার ফুলের ব্যবসা হয়। আমাদের দেশে কৃষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। গবেষকের সংখ্যাও বাড়ানো প্রয়োজন। পাইকারি বাজারের নির্ধারিত একটি স্থানের সংকট রয়েছে। তবে স্থান বরাদ্দ হয়েছে। বর্তমানে বৃষ্টি, ঝড় বেশি হওয়ায় কৃষকদের ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দামটা একটু বেশি। এ বছর যেভাবে ফুলের বাজার চলছে, তা করোনার সময়ের মতো। তবে সংকট যেগুলো রয়েছে তা পূরণ হলে অবশ্যই ফুলের বাজার ভালো হবে। বর্তমান কৃষিমন্ত্রী অনেক আন্তরিক ফুল নিয়ে।”
 
                
              
 
																 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    



























