পাবনার ঈশ্বরদীতে আট ছানাকে বস্তাবন্দি করে ডুবিয়ে হত্যার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে মা কুকুর। স্তনে জমে থাকা দুধের যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিল কুকুরটি। প্রাণীটির কষ্ট দূর করতে ‘ঈশ্বরদীয়ান’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের পরিচালক শাহরিয়ার অমিত নিজের পালিত কুকুরের সাতটি ছানা থেকে দুটি এনে কুকুরটিকে দেন। এখন ছানা দুটি সন্তানহারা মা কুকুরের স্তন থেকে দুধ পান করছে। এতে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করেছে মা কুকুর।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে মা কুকুরের কাছে ছানা দুটি এনে দেওয়া হয়।
‘ঈশ্বরদীয়ান’ সংগঠনের পরিচালক শাহরিয়ার অমিত বলেন, ‘ছানা হারিয়ে মা কুকুরটি খুব কষ্ট পাচ্ছিল। পাশাপাশি তার স্তনে দুধ জমে থাকার কারণে মনে হচ্ছিল বেশ ব্যথা অনুভব করছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলি। ইউএনও আমাকে পরামর্শ দেন অন্য কোনো কুকুরের কাছ থেকে দুটি ছানা সংগ্রহ করা যায় কি-না। তার পরামর্শ অনুযায়ী আমার নিজের পোষা কুকুরের সাতটি ছানা থেকে দুটি এনে কুকুরটির কাছে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে ছানা দুটি মেনে নিতে চাইনি। পরে স্তন থেকে দুধ বের করে ছানা দুটির মুখে মাখিয়ে দেওয়ার পর কুকুর ছানা দুটি নিজের মনে করে দুধ পান করানো শুরু করে। বর্তমানে মা কুকুরের সঙ্গে ছানা দুটি রয়েছে।’
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, ‘ছানা হারানো মা কুকুরটির চিকিৎসায় ভেটেরিনারি সার্জন ফারুক হোসেনকে প্রধান করে আট সদস্যের ইমার্জেন্সি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক মা কুকুরের খোঁজখবর নিচ্ছেন।’
ইউএনও মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সন্তানহারা কুকুরটি ছানা দুটিকে স্তনের দুধ পান করাচ্ছে এবং সঙ্গে রাখছে। এতে কিছুটা হলেও তার ছানা হারানো বেদনা হয়তো কম অনুভব করছে।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের একটি কোনায় থাকতো ‘টম’ নামের একটি কুকুর। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি বাচ্চা প্রসব করে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ছানাগুলো না পেয়ে পাগলপ্রায় অবস্থায় কান্না আর ছোটাছুটি করতে দেখা যায় মা কুকুরকে। পরে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীরা জানতে পারেন, ঈশ্বরদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী জীবিত আটটি কুকুর ছানাকে বস্তায় ভরে রোববার রাতের কোনো এক সময় ফেলে দেন উপজেলা পরিষদের পুকুরে।
পরদিন সকালে পুকুর থেকে ছানাগুলোর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি খাতুনের নামে ২ নভেম্বর রাতে মামলা করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন। মামলার দুই ঘণ্টা পর রাত ১টার দিকে নিশি খাতুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।






























