ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টার পদত্যাগ প্রায় নিশ্চিত হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর পর তাদের রাজনৈতিক গন্তব্য কোথায়—এ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা স্পষ্ট করলেও কোন দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা এখনও অস্পষ্ট।
তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে—নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগেই তিনি উপদেষ্টা পদ ছাড়বেন এবং ঢাকা-১০ আসন থেকেই ভোটের লড়াইয়ে নামবেন।
এনসিপিকে দূরে সরাচ্ছেন আসিফ? নানামুখী ইঙ্গিত
জুলাই আন্দোলনের সময়কার সহযোদ্ধাদের উদ্যোগে গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেকের ধারণা, আসিফ এনসিপি থেকেই নির্বাচন করবেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে—দলটির সঙ্গে তার সম্পর্ক ইতিমধ্যে বেশ শিথিল হয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে— গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপিকে নিয়ে তরুণদের বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চেয়েছিলেন আসিফ। কিন্তু এনসিপির নেতাদের সহযোগিতা না পাওয়ায় উদ্যোগটি সফল হয়নি। পরে বাগছাস ভেঙে এনসিপির সহযোগী সংগঠন হিসেবে জাতীয় ছাত্রশক্তি গঠনের সময়ও আসিফ ঘনিষ্ঠদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এসবের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে।
ফলে এনসিপির হয়ে নির্বাচনে লড়া কিংবা সেখানে সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরা—দুটি বিষয়ই এখন ধোঁয়াশায়।
বিকল্প পথ খুঁজছেন আসিফ: বিএনপি, গণঅধিকার ও অন্যান্য দলও আলোচনায়
আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠদের দাবি— এনসিপি এখন তার প্রথম পছন্দ নয়। বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে বিভিন্ন দফায় বৈঠক হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগের পরই তাঁর রাজনৈতিক দল ও ভবিষ্যৎ অবস্থান পরিষ্কার হতে পারে।
গণঅধিকার পরিষদে গেলে তাকে শীর্ষ নেতৃত্বেও দেখা যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন— “যদি তিনি ফিরে আসতে চান, আমরা তাকে স্বাগত জানাব।”
এনসিপির অবস্থান: দূরত্ব বাড়লেও সব দরজা বন্ধ নয়
এনসিপির এক শীর্ষ নেতা স্বীকার করেন— আসিফের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তবে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন হয়নি। সিদ্ধান্ত এখনো আসিফেরই হাতে।
তিনি আরও জানান— গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে ঐক্য গঠনের ব্যর্থতা এবং জাতীয় ছাত্রশক্তিতে আসিফ ঘনিষ্ঠদের বাদ দেওয়ার কারণেই সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়।
ঢাকা-১০—আসিফের সম্ভাব্য রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্র
গত ৯ নভেম্বর তিনি কুমিল্লার পরিবর্তে ঢাকা-১০ আসনে ভোটার হওয়ার আবেদন করেন। এটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে শুরু হয় নানা আলোচনা।
ঢাকা-১০ আসনটিতে এখনো বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি, তবে জামায়াতের প্রার্থী জসীম উদ্দিন সরকার ইতিমধ্যেই মনোনয়ন পেয়েছেন। এদিকে, আসিফের ভোটার স্থানান্তর ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত গুঞ্জনকে আরও জোরদার করছে।
প্রেসের সামনে আসিফ বলেন— “ঢাকা থেকে নির্বাচন করব—এই সিদ্ধান্ত মোটামুটি চূড়ান্ত। দলে যোগ দেব কি না, এখনো ভাবিনি। আপাতত স্বতন্ত্র হিসেবে লড়তে চাই।”
রাজনীতিতে আসিফ: গণঅধিকার থেকে উপদেষ্টা, আবার কী ফিরে যাচ্ছেন পুরোনো ঘরে?
জুলাই আন্দোলনের আগে আসিফ দীর্ঘদিন ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে এই দলে ফেরার সম্ভাবনা জোরালো বলে মনে করছেন অনেকেই।
বিএনপিতে যোগদানের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন— “আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কিছুই এখনো নিশ্চিত নয়।”
এনসিপির চূড়ান্ত কথা
দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন জানান— “আসিফ মাহমুদের সঙ্গে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি চাইলে যোগ দিতে পারবেন, তবে সিদ্ধান্ত তার ব্যক্তিগত।” সূত্র: কালবেলা



































