জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী আশালতা সেনগুপ্তা দুলী ওরফে প্রমীলার ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৬২ সালের ৩০ জুন আজকের এই দিনে প্রমীলা মারা যান। প্রমীলা নামটি মূলত কাজী নজরুল ইসলামেরই দেওয়া।
১৯০৮ সালে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তেওতা গ্রামে প্রমীলা জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বসন্ত কুমার সেনগুপ্ত ত্রিপুরা রাজ্যের নায়েব পদে চাকরি করতেন। আশালতা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তেওতা গ্রামেই লেখাপড়া করেছেন। তারপর বাবার অকালমৃত্যুতে মা গিরিবালা দেবী আশালতাকে নিয়ে চাচার বাড়ি কুমিল্লায় চলে যান। আশালতার চাচা ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্ত সে সময় কুমিল্লার কোর্ট অব ওয়ার্ডসের ইন্সপেক্টর ছিলেন।
১৯২১ সালের চৈত্র মাসের এক সন্ধ্যায় ইন্দ্রবাবুর বাসায় আশালতার সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হয়। ১৯২২ সালে আশালতার সঙ্গে নজরুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল শুক্রবার নজরুল আশালতার সঙ্গে মুসলমান রীতি অনুসারে কলকাতায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন আশালতার নাম হয় প্রমীলা নজরুল ইসলাম।
বিয়ের পর কাজী নজরুল ইসলাম এবং প্রমীলা নজরুল হুগলিতে একটি ভাড়াবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। প্রমীলা নজরুল এবং কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম সন্তান ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের অষ্টমী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন। এ জন্য কাজী নজরুল ইসলাম সন্তানের নাম রাখেন কৃষ্ণ মোহাম্মদ। কৃষ্ণ মোহাম্মদ মাত্র চার মাস বয়সেই মৃত্যুবরণ করে। তারপর প্রামীলা ও নজরুল হুগলি ছেড়ে কৃষ্ণনগরে চলে যান। সেখানেই ১৯২৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তাদের দ্বিতীয় পুত্র বুলবুলের জন্ম হয়। ১৯২৮ সালের শেষ দিকে কবি কৃষ্ণনগর ছেড়ে সপরিবার কলকাতায় চলে আসেন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে পানবাগান লেনের বাড়িতেই কবির তৃতীয় পুত্র সানি (কাজী সব্যসাচী) জন্মগ্রহণ করেন। পানবাগান লেনের বাড়ি থেকে নজরুল ইসলাম মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটের এক দ্বিতল বাড়িতে যান। সেই বাড়িতেই মে মাসের ৭/৮ তারিখে নজরুল প্রমীলার প্রাণপ্রিয় পুত্র বুলবুল বসন্ত রোগে মারা যায়। ১৯৩১ সালে নজরুলের ৪র্থ ও কনিষ্ঠ পুত্র নিনির (কাজী অনিরুদ্ধ) জন্ম হয়।
প্রমীলা ১৯৩৮ সালে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন। তার শরীরের নিম্নাংশ অবশ হয়ে যায়। আমৃত্যু তিনি ওই অবস্থাতেই নজরুলের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। প্রমীলার ইচ্ছানুযায়ী তাকে নজরুলের জন্মভূমি চুরুলিয়ায় দাফন করা হয়।