• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য বেশি হলে সমাজ মেনে নেয় না কেন


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪, ০৩:২৯ পিএম
স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য বেশি হলে সমাজ মেনে নেয় না কেন
বিয়ে হলো দুটো মানুষের একসঙ্গে জীবন কাটানোর প্রতিশ্রুতি। ছবি : সংগৃহীত

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ নিয়েই মানুষের বসবাস। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ের সময় করা সবকিছুর রীতি-প্রথাও সমাজ থেকেই আগত। যেকোনো বিষয়ে কোন নিয়মে, কীভাবে, কী কী করতে হবে, তা সমাজই ঠিক করে দেয়। বলা যায়, সমাজের নিয়মের ছকে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলতে পারলেই মানুষ সম্মানিত হয় এবং সর্বজনীন স্বীকৃতি পায়। আর সমাজের নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করা মানেই সেই মানুষের সম্মানহানি হবে। এভাবেই নির্দিষ্ট গণ্ডিতে এগিয়ে যাচ্ছে মানবজীবন।

সমাজের অন্য প্রথাগুলোর মতো বিয়ের বিষয়েও রয়েছে সুনির্দিষ্ট ছক। প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ নিজেদের সম্মতিতে বিয়ে করতে পারবেন। তবে তাদের বয়সের ভেদাভেদ হতে হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মানে বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই মেয়েকে বয়সে ছোট এবং ছেলেকে বয়সে বড় হতে হবে। এই বয়সের ফারাক ১০ বছর হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু অবশ্যই মেয়েকে ছোট হতে হবে। তবে যদি এর উল্টো হয় তখনই সমাজ কটু চোখে তাকায়। বিয়ে বা প্রেমের ক্ষেত্রে মেয়ের তুলনায় ছেলের বয়স কম হলে তখনই বাধে বিপত্তি। সমাজ সেই বিয়ের নাম দেয় ‘অসম বিয়ে’।
প্রেম, ভালোবাসা বয়স মানে না, মানে না কোনো পরিস্থিতি। প্রেমিকদের মুখে এমন কথাই শোনা যায়। কিন্তু এই যুক্তি মানতে সমাজ নারাজ। বয়সে ছোট ছেলেরা বড় মেয়েদের প্রেমে পড়লে বা বিয়ে করলেই তা সমাজে কটাক্ষ হয়। পরিবার থেকেও গ্রহণ করা হয় না এমন সম্পর্ককে। বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলের তুলনায় মেয়ে বয়সে বড় হলে পরিবারের লোকজনের মনে নানা ধারণা ঘুরপাক খায়।

তারা ভাবে, বয়সে বড় মেয়েরা স্ত্রী হিসেবে খুব একটি মানানসই হবে না। স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে মানসিকতা মিলবে না। তা ছাড়া স্ত্রীর বয়স আগে বেড়ে গেলে হয়তো সংসারে স্বামীরও মন বসবে না। এতে সংসারজীবনে নানা বিপত্তি হতে পারে। 

এ ছাড়া মেয়েদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গর্ভধারণ করতে হয়। মেয়েদের ৩০-৩৫ বছরের পর গর্ভধারণে বেশ সমস্যা হতে পারে। তাই স্ত্রী বয়সে বড় হলে মা হওয়ার ক্ষেত্রেও জটিলতা থাকে বলে ধারণা অনেকের।

পরিবারের সবাই চায় মেয়ের বিয়ে মেয়ের বয়সে বড় ছেলের সঙ্গে দিতে। এতে মেয়ের দেখাশোনার ভার পরিপূর্ণভাবে নিতে পারবে। সামাজিক নিরাপত্তার জায়গা নিশ্চিত হবে। কারণ বেশির ভাগ সংসারেই আয়ের উৎস শুধু ছেলেরাই থাকে। মেয়েরা ঘর সামলানোতেই বদ্ধ থাকে। যদিও এখন সময় বদলেছে। মেয়েরাও সমানতালে কাজ করছে। কিন্তু সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি। ছেলের আয়েই সংসার চলবে  এবং সেই সংসার সুখের হবে বলে এখনো ধারণা পোষণ করেন অনেকেই।

তবে ইদানীং বয়সে বড় ছেলেরা ছোট মেয়েদের বিয়ে করলে তা নিয়েও বিতর্ক হচ্ছে। কারণ বয়সের ব্যবধান ব্যাপক। স্বামীর বয়স ৬০ এবং স্ত্রীর বয়স ১৮ বছর হলেও সমাজে তা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। এমন বিয়েকেও ‘অসম বিয়ে’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিনথিয়াকে বিয়ে করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ। যা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় হয়েছে মিডিয়া পাড়ায়। কারণ সেই শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর এবং গভর্নিং বডির সদস্যের বয়স হচ্ছে ৬০ বছর। বয়সের ফারাক উপেক্ষা করেই প্রেমে জড়িয়েছেন তারা। এরপর পরিবারের অগোচরে বিয়েও করেছেন। আপাতদৃষ্টে এমন ঘটনা সমাজের জন্য অসহনীয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিয়ে হলো দুটো মানুষের একসঙ্গে জীবন কাটানোর প্রতিশ্রুতি। কে, কাকে প্রতিশ্রুতি দেবে, কেন দেবে, তা একান্তই ব্যক্তিগত। সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠরা অসম বিয়েকে মেনে নেয় না, তাই এটি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। যুগ যুগ ধরে সমাজ যে ভাব বহন করছে, তাই সঠিক বলে মেনে নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, অসম বয়সের বিয়ে সমাজ ও পরিবার সহজে মেনে নেয় না। তাদের অসংখ্য কটু কথা সহ্য করতে হয়। হাজারো লাঞ্ছনা সইতে হয়। এসব কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমস্যাও সৃষ্টি হয়। আবার বয়সের পার্থক্যের কারণে মানসিক দিক থেকেও বেশ অমিল থাকতে পারে। যার ফলে সংসারজীবনেও অশান্তি দেখা দিতে পারে। পরিশেষে তাদের বিচ্ছেদের পথও বেছে নেওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

এদিকে পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে অসম বিয়ে তেমন কোনো ঘটনা নয়। সেখানে ঘরে ঘরে অসম বিয়ে হয়। সংসার জীবনের এক পর্যায়ে সবকিছুই ম্লান হয়ে যেতে পারে। দৈহিক জৌলুশও হারিয়ে যেতে পারে। তবে সমঝোতা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ ও দায়িত্ববোধ থাকলে সম কিংবা অসম যেকোনো বিয়েতেই সুখ খুঁজে পাওয়া যায়।
 

Link copied!