• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ কী, কেন পালিত হয়?


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২২, ০৬:৫২ পিএম
‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ কী, কেন পালিত হয়?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিশেষ দিন হচ্ছে ব্ল্যাক ফ্রাইডে। এটি পালিত হয় প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শেষ শুক্রবার। এই বছর দিনটি পালিত হয় ২৫ নভেম্বর। দিনটি উপলক্ষে ধুম পড়ে কেনাকাটায়। কারণ এই দিনে বিশেষ অফারে পণ্যের উপর ছাড় দেয় মার্কিন ব্যবসায়ীরা। 

প্রথমে ব্ল্যাক ফ্রাইডে তেমন পরিচিতি ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই দিনটি পালিত হতো। পরে ইউরোপ, আমেরিকার বাসিন্দারাও এই দিনটিতে মেতে উঠে। বাদ যায় না বাংলাদেশিরাও। বিদেশের মাটিতে হোক কিংবা দেশে বসেও ব্ল্যাক ফ্রাইডে এখন উত্সবের আরেক নাম। বিশেষ করে কেনাকাটায় এই দিনটির তাত্পর্য অনেক।

নভেম্বর মানে বাংলাদেশে শীতের সময়। এই সময় বিয়ে বা পার্টির আনুষ্ঠানিকতা বাড়ে। কেনাকাটায়ও ধুম পড়ে যায়। ব্ল্যাক ফ্রাইডের অফারকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই এই দিনে শপিং সেরে ফেলেন। ব্যবসায়ীরা দোকানে কিংবা অনলাইনেও বিভিন্ন অফারে পণ্যে কেনার সুযোগ দেন। শোরুম, ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে অনলাইনের পেজগুলোতে দেওয়া হয় ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ সেল। 

কিন্তু আপনি কি জানেন, কীভাবে এলো ব্ল্যাক ফ্রাইডে? অনেকেই না জেনে উৎসবে সামিল হচ্ছেন। তবে এর পেছনের কাহিণি জেনে দিনটি উদযাপন করলে আনন্দটা আরও দ্বিগুণ হবে।

১৮৬৯ সালে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ সেল প্রথম শুরু হয় আমেরিকায়। যুক্তরাষ্ট্রে ‘থ্যাঙ্কসগিভিং’-এর পরেই শুরু হয় ব্ল্যাক ফ্রাইডে। ‘থ্যাঙ্কসগিভিং’ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবান্ন উৎসব।  নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবার ‘থ্যাঙ্কসগিভিং’ পালন করেই পরদিনই অর্থাত্ নভেম্বরের শেষ শুক্রবার পালিত হয় ব্ল্যাক ফ্রাইডে।

১৮৬৯ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। মার্কিন সোনার বাজারের শুরু হয় বিপর্যয়। ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। ওই সময় তারা এমন একটি দিনের কথা ভাবেন যেদিন সব পণ্যের উপর বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে এবং ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যাবে। ব্যবসায়ীদের সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক হয় বিশেষ অফারের দিনটি হবে নভেম্বরের শেষ শুক্রবার। এরপরই দিনটির প্রচলন শুরু। 

দিনটি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা খাতে সুদিন আসে। ওই দিন যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি হয় এতে অর্থনৈতিক সূচক বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা ওই সময় হিসাবের খাতায় লোকসানের হিসাব লিখতেন লাল কালিতে। আর লাভের হিসাব লেখা হতো কালো কালিতে। সেই থেকেই ব্ল্যাক ফ্রাইডে নাম রাখা হয়। কালো বা ব্ল্যাক শব্দটি ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক হয়ে দাঁড়ায়।

ব্ল্যাক ফ্রাইডে-তে ভোর ৪টা থেকে দোকান খোলেন ব্যবসায়ীরা। এমনকি অনেক ব্যবসায়ী মধ্যরাত থেকেই দোকান খুলে বসেন। ক্রেতারাও সময় জেনে চলে আসেন কেনাকাটায়। ক্রিসমাসের আগে এমন অফারে সব কেনাকাটা সেরে নেন ক্রেতারাও। জানা যায়, ব্ল্যাক ফ্রাইডের পুরো দিনটিতে আমেরিকায় এতো পরিমাণ বিক্রি বাড়ে যা দেশটির অর্থনীতির সূচককে বাড়িয়ে দেয়। বছর শেষে এই প্রাপ্তি দেশটির জন্য ইতিবাচক। এক লাফে অনেকখানি এগিয়ে যায়।

ইতিহাসের আরও পেছনে তাকালে জানা যায়, ১৮০০ শতকেও ব্ল্যাক ফ্রাইডে প্রচলন ছিল। ওই সময় এই দিনটি বিশেষ ছাড়ে বিক্রি হত ক্রীতদাস। আমেরিকায় প্রকাশ্যে বাজারে হাঁকডাকে ক্রীতদাস-দাসীদের বিক্রি করা হতো। ধনীদের ওই সময় ক্রীতদাসের প্রয়োজন হতো। তাই কম মূল্যে ক্রীতদাস কিনে নিয়ে যেতেন। অক্টোবর মাসের শেষ দিনে হ্যালোইন, নভেম্বর মাসে থ্যাংকসগিভিং, ডিসেম্বরে বড়দিন সবকিছুতেই বিশাল আয়োজন হতো। ক্রিতদাসরা সেই উত্সব আয়োজনের সব প্রস্তুতি করতেন। তাছাড়া দেশটিতে নবান্ন উৎসব হতো। ঘরে ঘরে ফসল তোলা হতো। তাই ক্রীতদাসের প্রয়োজন হতো। ব্ল্যাক ফ্রাইডে তে আমেরিকায় সব শহরে বিশেষ হাট বসিয়ে বেচাকেনা হতো ক্রীতদাসদের। কারণ বিশেষ ছাড়ে তাদের কেনা যেত।

ব্ল্যাক ফ্রাইডে পেছনে আরও একটি ইতিহাস রয়েছে। ১৯৫০ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে বছরের সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় ফুটবল খেলাও। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রের পথে প্রচণ্ড মানুষ নেমে যায়। ট্রাফিকে ভিড় জমে। যা সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খায় ট্রাফিক পুলিশ। বিশেষ ছাড়ে পণ্য কেনা, লেনদেন বাড়া এবং খেলার দর্শকদের সামলাতে গিয়ে দেশটির পুলিশরা না খেয়ে পথে দাড়িয়ে থাকে সারাদিন। সেই থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশরা দিনটির নাম দেয় ব্ল্যাক ফ্রাইডে।

ক্যালিফোর্নিয়াসহ আমেরিকার বেশকিছু অংশে সরকারি কর্মচারীদের ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়। এই ছুটি ব্ল্যাক ফ্রাইডে ও থ্যাঙ্কসগিভিং দুই দিনই হয়ে থাকে।

 

সূত্র: হিস্টোরি ডটকম

Link copied!