কোরবানি ঈদ মুসলমানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবের একটি বড় প্রস্তুতি হলো কোরবানির পশু কেনা এবং সঠিকভাবে তার যত্ন নেওয়া। অনেকেই কোরবানির পশু কেনার পর যথাযথ পরিচর্যার অভাবে পশুটিকে কষ্ট দেন, অসুস্থ করে ফেলেন বা ওজন কমিয়ে ফেলেন। অথচ একটু যত্ন, নিয়মিত খেয়াল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় পশুটি সুস্থ থাকে এবং কোরবানিও হয় সুন্দর ও শরীয়ত সম্মত।
পশু কেনার পরপরই কী করবেন?
পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দিন। নতুন পরিবেশে আসার পর পশুটি যেন ভয় না পায়, এজন্য ১–২ দিন সময় দিন তাকে মানিয়ে নিতে।
অতিরিক্ত মানুষ ভিড় করবেন না। শিশুরা বা বাড়ির লোকজন ভিড় করলে পশু আতঙ্কিত বা আক্রমণাত্মক হয়ে যেতে পারে।
পশুর সাধারণ চলাফেরা খেয়াল রাখুন। হাঁটাচলা, খাওয়া, পানি পান স্বাভাবিক করছে কিনা খেয়াল রাখুন।
পশুকে কেমন খাবার দেবেন
ঘাস ও কুঁড়া গরুর জন্য পুষ্টিকর ও সহজ পাচ্য। চিটা ভাত বা চালের গুঁড়া শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। ভুট্টা গুঁড়া/গমের ভূষি ওজন বাড়াতে কার্যকর। সবজি যেমন লাউ, কুমড়া, কলাপাতা— হজমে সহায়ক। লবণ ও খনিজ: কখনও কখনও সামান্য লবণ বা মিনারেল মিশ্রিত পানি দেওয়া যেতে পারে।
দিনে ২–৩ বার নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী খাবার দিন।প্রতিবার খাবারের পর বিশ্রাম ও পানি দিন। হঠাৎ করে খাবার পরিবর্তন করবেন না। এতে হজমের সমস্যা হতে পারে। পশুকে দিনে অন্তত ২–৩ বার পরিষ্কার পানি পান করান।
পশুর পরিচর্যা
গরমের দিনে পশুকে একবার গোসল করালে আরাম পায় এবং চামড়া ঝকঝকে থাকে। গোসলের সময় সাবান/শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে সাবধানতার সঙ্গে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় বা বৃষ্টির দিনে গোসল না করানোই ভালো।
পশুকে শুকনো জায়গায় রাখুন— পানি জমে গেলে তাৎক্ষণিক পরিষ্কার করুন। মলমূত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন, যেন মাছি-বেরোয়া না হয়। নিচে খড় বা পাটি বিছিয়ে দিন যাতে পশু আরাম পায়।
ব্রাশ দিয়ে পশুর গা ঘষে পরিষ্কার করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। চোখ, কান ও লেজের অংশ নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
হাঁটাচলা ও শরীরচর্চা
পশুকে দিনে অন্তত ১৫–৩০ মিনিট হাঁটতে দিন। এতে হজম ভালো হয়, শরীর ফিট থাকে। দড়ি দিয়ে আটকে রাখার পাশাপাশি একটু সময় খোলা জায়গায় নাড়াচাড়া করতে দিন।
পশু অসুস্থ হলে করণীয়
পশু অসুস্থ হওয়ার কিছু লক্ষণ রয়েছে। খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া, পাতলা পায়খানা, দাঁড়িয়ে থাকতে না চাওয়া, চোখে পানি বা নাক দিয়ে তরল বের হওয়া।
এ ধরনের সমস্যা হলে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আগে থেকেই কাছাকাছি কোনো ভেটেরিনারি হাসপাতালের ঠিকানা সংগ্রহ করে রাখুন।
পশুর প্রতি আচরণ
ইসলাম ধর্মে পশুর প্রতি দয়া করার কথা বলা হয়েছে। জোর করে টানাটানি বা মারধর করবেন না।পশুর সঙ্গে মিশে যান— আদর করলে তার মানসিক চাপ কমে। শিশুরা যেন পশুকে বিরক্ত না করে, তা খেয়াল রাখুন।
কোরবানির আগের প্রস্তুতি
পশুকে আগের রাতেই গোসল করিয়ে দিন।কোরবানির সময় পশুর চোখ বেঁধে দিন, যাতে ভয় না পায়। কোরবানির আগে পানি খাওয়ানো সুন্নত।