‘আমি ডিআইজির নাম করেই খাই। আমি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও আমি ডিআইজির বইনতে (ভগ্নিপতি), আমি খাবু না তে (তো) ক্যারা খাবো। এই শোনেন আপনি আইসে যদি দুই লাখ টাকা দিয়ে বলেন, ভাই আপনি একটু দেইখেন, আমি কইলাম, দেখলাম। তাইলে আমার দুই লাখ টাকা হজম হইলো না হালাল হইলো?’ তখন পাশ থেকে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘তুমি তো পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, মানুষ জানবে না?’ তখন খালেদ মাসুদ বলেন, ‘মানুষ জানবই-তো, আমি দিবার পাই দেখেই, আমি খাবার পাই। আমার ওতাহানি ক্ষমতা আছে তো, তুমগরে নাই, তাই তুমরা খাবার পাও না।’
চাঁদাবাজি, বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাসুদ তালুকদারের কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। মঙ্গলবার অডিওটি ছড়ানোর পর থেকে ফেসবুকে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
খালেদ মাসুদ তালুকদারের বাড়ি মাদারগঞ্জ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে। তিনি পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আশরাফুর রহমানের ভগ্নিপতি। অডিওতে কথোপকথনে অংশ নেওয়া অন্য ব্যক্তিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডের অডিওতে শোনা যায়- খালেদ মাসুদ বলছেন, ‘৬ লাখ টাকা এককালীন দিছে, আর এক লাখ করে প্রতি মাসে দিবার লাগছে।’
অডিওতে খালেদ মাসুদকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার ওসি আইসা কইলো, ভাই দুই লাখ টাকা থাকলো, একটু দেইখেন আমার মুক (দিক)। আমি দুই লাখ টাকা নিয়ে ওরে ভালো করে দেখলাম। ওসিরা আমারে ট্যাকা দিলে আমি কি না করমু, সুযোগ কি বারেবারে আসে? আমি তো হালাল করেই খাই। ছয় লাখ টাকা একবারে দিছে আর এক লাখ করে প্রতি মাসে দেয়, না হইলে গাড়ি বন্ধ। ময়মনসিংহের সব বালু আমার উনতনে থেকে যায়।’ তখন পাশের একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এই রিপোর্ট তো বাবুল (মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মঞ্জুর কাদের বাবুল খান) ভাই জানে।’ জবাবে খালেদ মাসুদ বলেন, ‘বাবুল জানুক বা বাবুলের বাপ জানুক গা, তাতে আমার কী আসে যাই? আমি আমার হেডামে চলি। আমার নাম কইয়ে চাঁন্দা তুলবার গেছিল, তিন জনকে আটকাইয়া থুইছি জেলখানার মধ্যে, আইজ দেড় মাস হইয়া গেলো। আমার ক্ষমতা আছে, আমি আটকাইয়া থুইছি। আইজকে ক্ষমতা আছে দেহামু, কাল থাকবো না, দেহামু না। ক্ষমতা কি চিরদিন থাকবো?’ তখন পাশ থেকে আরেকজন বলেন, ‘আমগোর এহন সিজন চলতাছে।’
আলাপচারিতার একপর্যায়ে আরেক ব্যক্তি খালেদ মাসুদের উদ্দেশে বলেন, ‘তুমি তো (বিএনপি নেতা) একটা সংগঠনের দ্বিতীয় (ক্ষমতাধর) ব্যক্তি?’ তখন খালেদ মাসুদকে বলতে শোনা যায়, ‘তাহলে আমাকে বহিষ্কার করো, কার কতখানি ক্ষেম (ক্ষমতা) আছে, ক্ষেম থাকলে বহিষ্কার করো। আমি সুহেল (বিএনপি নেতা) চান্দাবাজি-ধান্দাবাজি করবার লাগছে, তাহলে বহিষ্কার করে দাও।’
ছড়িয়ে পড়া অডিওটি নিজের বলে স্বীকার করেছেন খালেদ মাসুদ তালুকদার। তিনি বলেন, ‘প্রথমেই আমার ভুল স্বীকার করছি। বিষয়টি আমি আসলেই বুঝতে পারি নাই। একটি মহল কখনোই চায়নি আমি পৌর বিএনপির সেক্রেটারি হই, তারপরও আমিই হয়েছি। এখন আমি যদি নির্বাচন করি, তাই আমার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ নানা ষড়যন্ত্র করছে। মাঝে-মধ্যে তারা আমাকে নানা বিষয়ে উসকিয়ে দিতেন আর বলতেন, আমি টাকা-পয়সা খাই। কিন্তু আমি তখন বুঝতে পারি নাই যে এটা তাদের ষড়যন্ত্র ছিল।’
মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মঞ্জুর কাদের বাবুল খান বলেন, ‘আমি অডিওটি শুনেছি। এ বিষয়ে তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। ব্যাখ্যা পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’