• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অতিরিক্ত কাজের চাপে ভয়াবহ চাকরির বাজার, সব ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন তরুণরা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৩, ১২:১২ পিএম
অতিরিক্ত কাজের চাপে ভয়াবহ চাকরির বাজার, সব ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন তরুণরা

চীনে অতিরিক্ত কাজের চাপ, কর্মস্থলে অমানুষিক শ্রম এবং চাকরির বাজারের করুণ দশা- এসব কারণে তরুণরা চাকরি ছেড়ে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছেন। দেশটিতে এমন তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। যারা নিজেদের নাম দিয়েছে ‘পূর্ণকালীন সন্তান’।

এই তরুণরা বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে চাইছে- অমানুষিক পরিশ্রমের পর কিছুদিন আরাম করে দিন কাটাতে, নয়ত চাকরি না জোটাতে পেরে।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, চীনে তরুণ প্রজন্মকে সবসময় বলা হয়েছে সাফল্য পেতে হলে, জীবনে জিততে হলে লেখাপড়ার জন্য অনেক খাটতে হবে, কঠিন পরিশ্রম করে ভাল ডিগ্রি পেতে হবে। এখন সেই প্রজন্ম মনে করছে জীবনযুদ্ধে তারা পরাজিত- তারা একটা যাঁতাকলে আটকা পড়েছে।

মে মাসে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশটিতে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের বেশি কর্মহীন। ২০১৮ সালে কর্তৃপক্ষ এই তথ্য প্রকাশ শুরু করার পর থেকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেকারত্বের হার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। গ্রামীণ এলাকায় চাকরির বাজারের চিত্র এই পরিসংখ্যানের অন্তর্ভুক্ত নয়।

যদিও তথাকথিত এই পূর্ণকালীন সন্তানদের অনেকেই বলছেন, তারা দীর্ঘমেয়াদে ঘরে বসে থাকতে চান না – এটা নিতান্তই সাময়িক। এটা শুধুই বিশ্রাম করার জন্য কিছু সময় বেছে নেওয়া, সেই সময় সামনের কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে ভাবা এবং ভাল চাকরি খোঁজা। কিন্তু এটা বলা যত সহজ, কাজটা তত সহজ নয়।

চীনে কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখার ব্যাপারটা এতটাই কঠিন যে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা শ্রম দিয়ে দম ফুরিয়ে যাওয়া প্রাপ্তবয়স্করাই যে দেশটির পূর্ণকালীন সন্তান হয়ে উঠছেন, তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই।

চীনে কর্মসংস্কৃতিকে প্রায়ই ব্যাখ্যা করা হয় প্রচলিত ‘৯৯৬’ নামে – অর্থাৎ সেখানে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় সপ্তাহে ৬ দিন।

চেন ডুডু একজন “পূর্ণকালীন কন্যাসন্তান” হয়েছেন। এ বছরের শুরুর দিকে আবাসন শিল্প খাতে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন তিনি। খাটতে খাটতে ক্রমশ তার দম ফুরিয়ে আসছিল এবং কাজে তার যথেষ্ট মূল্যায়নও করা হচ্ছিল না। ২৭ বছর বয়সী চেন ডুডু বলছিলেন, বাসভাড়া দেবার পর তার হাতে “খরচের অর্থ আর প্রায় কিছুই থাকত না”।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মধ্যেও কম হতাশা নেই। তারাও এতটাই হতাশ যে অনেকে ইচ্ছে করে পরীক্ষা ফেল করছে যাতে স্নাতক হওয়াটা পিছিয়ে দেওয়া যায়।

গত কয়েক সপ্তাহে চীনের সামাজিক মাধ্যম ছেয়ে গেছে গ্র্যাজুয়েট হওয়া শিক্ষার্থীদের ভিন্নধর্মী নানা ছবিতে। ছবিতে সাফল্যে উল্লাস প্রকাশের বদলে সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে স্নাতক উপাধি নেবার বিশেষ গাউন পরে আর গ্র্যাজুয়েট টুপি দিয়ে মুখ ঢেকে তারা মাটিতে ‘সটান শুয়ে আছেন’। কোনো কোনো সদ্য স্নাতকরা ছবি পোস্ট করেছেন যেখানে তাদের হাতে সার্টিফিকেট ধরা আছে আবর্জনার বিনের ঠিক উপরে, যেন সেটা এখুনি ময়লার ঝুড়িতে ফেলা হবে।

এক সময়ে চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন স্বচ্ছল পরিবারের সন্তানরা। কিন্তু ২০১২ থেকে ২০২২ এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশে। কারণ প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে উন্নত সুযোগ পাবার জন্য ডিগ্রি অর্জনকে সেই জগতে পা রাখার একটা গুরুত্বপূর্ণ সিঁড়ি বলে মনে করতে শুরু করে বহু তরুণরা। কিন্তু চাকরির বাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়ায় তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা রূপ নেয় চরম হতাশায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও এক কোটি ১৬ লাখ নতুন স্নাতক এখন চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় নামায় অবস্থা আরও খারাপ হয়ে উঠবে।

ডাইরেক্ট এইচআর নামে সাংহাই-ভিত্তিক একটি নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মিরিয়াম উইকার্টসহেইম বলেন, “পরিস্থিতি বেশ খারাপ। মানুষ ক্লান্ত এবং অনেকেই বিকল্প পথ খুঁজছে। মানুষের মধ্যে তীব্র হতাশা তৈরি হয়েছে।”

কোভিডের পর চীনে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার অপ্রত্যাশিত শ্লথ গতি বেকারত্ব এত বাড়ার প্রধান কারণ বলে মনে করেন ব্রুস প্যাং, যিনি জোন্স ল্যাং লাসালে নামে একটি সংস্থায় বৃহত্তর চীন বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ।

চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ডেইলি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় মে মাসে চীনা নেতা শি জিনপিংকে উদ্ধৃত করে বলা হয় তিনি তরুণ প্রজন্মকে “তেতো ওষুধ গেলার” আহ্বান জানিয়েছেন। ম্যান্ডারিন ভাষায় যার অর্থ ‘কষ্ট সহ্য করো।’

Link copied!